চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে এক বিধ্বংসী ব্যাটিং প্রদর্শনীতে মেতে উঠেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। ঢাকায় অনুষ্ঠিত একদিনের আন্তর্জাতিক (ওয়ানডে) সিরিজে ২-১ ব্যবধানে পরাজয়ের গ্লানি ভুলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে বদ্ধপরিকর ক্যারিবীয়রা। আজকের এই দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেই তারা এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করতে চায়, যা তাদের ওয়ানডে সিরিজের হতাশা কিছুটা হলেও ঘুচিয়ে দেবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের শুরু
সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে তাদের শুরুটা আশানুরূপ ছিল না। দলীয় মাত্র ১ রানের মাথায় তাসকিন আহমেদের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার ব্রেন্ডন কিং, যা ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে কিছুটা উদ্বেগের সৃষ্টি করে। এই দ্রুত উইকেট পতনে বাংলাদেশ দল প্রথম আঘাত হানতে সক্ষম হয় এবং ম্যাচের শুরুতেই প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার একটি সুযোগ তৈরি করে।
তবে সেই চাপ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। এরপর দলের হাল ধরেন অধিনায়ক শাই হোপ। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন আরেক ওপেনার আলিক অ্যাথেঞ্জ। এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের জুটি বাংলাদেশের বোলারদের উপর রীতিমতো তাণ্ডব চালায়। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তারা মাত্র ৫৯ বলে ১০৫ রানের এক অসাধারণ পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন, যা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের ভিত মজবুত করে এবং রান রেটকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাদের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে মাঠের দর্শকরা যেমন মুগ্ধ হন, তেমনি প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপরও চাপ তৈরি হয়। হোপ এবং অ্যাথেঞ্জের প্রতিটি বাউন্ডারি ও ছক্কা যেন ক্যারিবীয়দের আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
গুরুত্বপূর্ণ উইকেট পতন ও নাসুমের জাদু
১১.২ ওভারে দলীয় ১০৬ রানের মাথায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে কিছুটা স্বস্তি ফেরে যখন আক্রমণাত্মক ওপেনার আলিক অ্যাথেঞ্জ সাজঘরে ফেরেন। ৩৩ বলে ৫টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে তিনি ৫২ রানের এক গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। বাংলাদেশের স্পিনার নাসুম আহমেদের বলে আউট হয়ে তিনি ফিরে যান। অ্যাথেঞ্জের বিদায় কিছুটা হলেও রানের গতিতে লাগাম টানার সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশকে।
তবে নাটকীয়তা তখনো শেষ হয়নি। অ্যাথেঞ্জের বিদায়ের পরপরই চার নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে শেরেফান রাদারফোর্ড নাসুম আহমেদের বলে বোল্ড হয়ে ‘গোল্ডেন ডাক’ মারেন। পরপর দুই বলে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে নাসুম আহমেদ বাংলাদেশের আশা জাগিয়ে তোলেন এবং ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। তার এই জোড়া আঘাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের গতি কিছুটা শ্লথ হয় এবং বাংলাদেশের ফিল্ডিং ইউনিট উজ্জীবিত হয়ে ওঠে।
সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণী লড়াই
উল্লেখ্য, সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৬৫ রান সংগ্রহ করে ১৬ রানের জয় পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই ম্যাচে ক্যারিবীয়রা তাদের ব্যাটিং শক্তি প্রমাণ করেছিল। আজকের এই দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জয় নিশ্চিত করতে পারলেই তারা এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিজেদের করে নেবে, যা তাদের জন্য একটি বড় অর্জন হবে এবং ওয়ানডে সিরিজের পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ দলের জন্য এই ম্যাচটি সিরিজ রক্ষার এক কঠিন লড়াই। ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টোয়েন্টিতেও পরাজয়ের গ্লানি এড়াতে অধিনায়ক লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন দলটি নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করছে। এই ম্যাচে হেরে গেলে ঘরের মাঠে আরেকটি সিরিজ হাতছাড়া হবে টাইগারদের, যা তাদের আত্মবিশ্বাসের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সহ দলের প্রতিটি সদস্যের সেরা পারফর্মেন্সের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো দেশ।
