চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে, যা এখন সর্বমহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত। দীর্ঘ আট বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলেও, এর অভূতপূর্ব আকার এবং সংগঠনটির নিজস্ব গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে দেখা দিয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। শিক্ষার্থীরা এই কমিটিকে ‘ঢাউস’ কমিটি হিসেবে আখ্যায়িত করছেন, যা কেবল আকারের বিশালত্বকেই নয়, বরং এর পেছনে লুকিয়ে থাকা সাংগঠনিক জটিলতাকেও নির্দেশ করে।
দীর্ঘ আট বছর পর বিশাল কলেবরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
বুধবার রাতে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের স্বাক্ষরিত একটি তালিকা সংগঠনটির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়। রাত সোয়া ১০টার দিকে প্রকাশিত এই কমিটি তালিকা অনুযায়ী, মোট ৪২০ জন সদস্যকে বিভিন্ন পদে পদায়ন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে চবি শাখা ছাত্রদলের এত বড় কমিটি পূর্বে কখনো গঠিত হয়নি, যা এটিকে নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক কিন্তু বিতর্কিত কমিটি হিসেবে চিহ্নিত করছে। বিশেষ করে, চাকসুতে (ছাত্র সংসদ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জয়ী আয়ুবুর রহমান এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও একই গুরুত্বপূর্ণ পদ অর্জন করেছেন, যা তার সাংগঠনিক সক্রিয়তার ধারাবাহিকতাকে তুলে ধরে।
গঠনতন্ত্রের সীমালঙ্ঘন ও নারী প্রতিনিধিত্বের অভাব
এই কমিটির ঘোষণা একাধারে যেমন দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েছে, তেমনই জন্ম দিয়েছে একাধিক গুরুতর প্রশ্নের। শাখা ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ৮১ জন হওয়ার কথা। অথচ ঘোষিত ৪২০ সদস্যের কমিটি গঠনতন্ত্রের নির্ধারিত সংখ্যার প্রায় পাঁচ গুণেরও বেশি, যা সরাসরি সাংগঠনিক বিধিমালাকে অগ্রাহ্য করে। এই অনিয়মের পাশাপাশি, নারী প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রেও গুরুতর বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়েছে। ৪২০ সদস্যের এই বৃহৎ কমিটিতে মাত্র ১১ জন ছাত্রী রয়েছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, মোট সদস্য সংখ্যার অন্তত ১০ শতাংশ, অর্থাৎ বর্তমান কমিটির ক্ষেত্রে ৪২ জন ছাত্রী থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। এই গুরুতর অসঙ্গতিগুলো কমিটির স্বচ্ছতা ও সাংগঠনিক নীতির প্রতি অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
আগের কমিটির ধারাবাহিকতা ও বর্তমান বিন্যাস
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট চবি শাখা ছাত্রদলের একটি পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে, চাকসু নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে অন্য প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কর্তৃক একজন সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়। অবশিষ্ট চার সদস্যের আংশিক কমিটিই এবার পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করল। সর্বশেষ ২০১৭ সালে চবি ছাত্রদলের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়েছিল, যার সদস্য সংখ্যা ছিল ২৪৩ জন। সেই কমিটি ২০২৩ সালে বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য অপেক্ষা করছিল নেতাকর্মীরা।
নবঘোষিত ৪২০ সদস্যের এই কমিটিতে বিভিন্ন পদে পদায়ন করা হয়েছে: ৫৫ জন সহসভাপতি, ৯২ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৬৩ জন সহসাধারণ সম্পাদক, ৬৪ জন সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং ৬২ জন সদস্য। এত বৃহৎ সংখ্যক পদ সৃষ্টি এবং বিতরণের কারণ নিয়ে ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ মহলে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। গঠনতন্ত্র না মেনে এই ‘ঢাউস’ কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সাংগঠনিক প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন। তবে, এই বিশাল কমিটি গঠন ও এর সম্ভাব্য কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
