More

    আগারগাঁও–শাহবাগ অংশে মেট্রোরেল আবার চালু

    রাজধানী ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় মেট্রোরেল এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা লাখো মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতকে করেছে গতিময় ও আরামদায়ক। তবে সম্প্রতি এই গুরুত্বপূর্ণ গণপরিবহন ব্যবস্থায় পরপর দুটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ, গত বুধবার রাতে আগারগাঁও থেকে শাহবাগ অংশে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলেও, দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তা আবার পুরোদমে সচল হয়েছে, যা যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি এনেছে।

    আগারগাঁও-শাহবাগ অংশে সাময়িক বিঘ্ন ও দ্রুত সমাধান

    গতকাল বুধবার রাত আনুমানিক সোয়া ৯টার দিকে আগারগাঁও থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধান কারণ ছিল ফার্মগেট এলাকার একটি নির্দিষ্ট স্থানে কম্পন অনুভূত হওয়া। উল্লেখ্য, এই স্থানটিই গত সপ্তাহে একটি বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার ঘটনার কেন্দ্র ছিল। যাত্রী সুরক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে এই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তবে, আশার কথা হলো, মতিঝিল থেকে শাহবাগ এবং উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক ছিল, যা এই অংশের যাত্রীদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও লাঘব করেছে।

    ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজ সকালে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন যে, গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার মধ্যেই সমস্ত কারিগরি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী সম্পূর্ণ নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু হয়েছে। এই দ্রুততম সময়ে সমস্যার সমাধান ডিএমটিসিএল-এর কর্মদক্ষতা এবং যাত্রীসেবায় তাদের অঙ্গীকারের প্রমাণ বহন করে।

    পূর্ববর্তী দুর্ঘটনা এবং এর প্রেক্ষাপট

    বর্তমান এই সাময়িক বিঘ্নের সূত্রপাত হয়েছিল গত রোববার (২৬ অক্টোবর)। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফার্মগেট স্টেশনের ঠিক পশ্চিম পাশের একটি পিলার ও উড়ালপথের সংযোগে থাকা গুরুত্বপূর্ণ বিয়ারিং প্যাডটি আকস্মিকভাবে খুলে নিচে পড়ে যায়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আবুল কালাম নামের এক যুবক প্রাণ হারান, যা সমগ্র জাতির মধ্যে শোকের ছায়া ফেলে। এই ভয়াবহ ঘটনার পরপরই পুরো মেট্রোরেল পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

    তবে, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে ডিএমটিসিএল সচেষ্ট হয়। একই দিন বেলা তিনটার দিকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে মতিঝিল থেকে শাহবাগ অংশে মেট্রোরেল আংশিকভাবে চালু করা হয়। এরপর, জরুরি ভিত্তিতে বিয়ারিং প্যাড প্রতিস্থাপন ও নিরাপত্তা যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন করে গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে পুরো পথে মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণরূপে চালু করা হয়।

    সাবধানতা ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

    পুরো পথে মেট্রোরেল চালু হলেও, ফার্মগেটের দুর্ঘটনাস্থলে গত তিন দিন ধরে বিশেষ সতর্কতার সাথে ধীরগতিতে ট্রেন চলাচল করছিল। কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি ছিল নিরাপত্তার একটি অপরিহার্য অংশ, যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যায় এবং যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। বুধবার রাতে অনুভূত কম্পন সম্ভবত এই পূর্ব সতর্কতারই ফল এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কারণ।

    মেট্রোরেল রাজধানীর জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। বারবার এই ধরনের বিঘ্ন নিঃসন্দেহে যাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করে। তাই, ডিএমটিসিএল-এর উচিত ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে আরও কঠোর নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। নিয়মিত তদারকি, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় অত্যাধুনিক প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে মেট্রোরেল পরিষেবা নিরবচ্ছিন্ন ও সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখা সম্ভব, যা নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক হবে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here