অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আনতে এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পথ সুগম করতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত দ্রুততার সাথে গ্রহণ করতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বা প্রস্তাবিত সংস্কারসমূহ বাস্তবায়নের বিষয়ে খুব শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে এবং একবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তা থেকে কোনো অবস্থাতেই সরে আসবে না। একই সাথে, নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর অধ্যাদেশের খসড়ায় নতুন করে পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। এটি নিঃসন্দেহে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে সহায়ক হবে।
জাতীয় সনদ ও সংস্কার প্রস্তাবনা: সরকারের দৃঢ় অবস্থান
গত শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন প্রস্তুতির বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকজন উপদেষ্টার সাথে মিলিত হয়ে আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও করণীয় সম্পর্কে গভীর পর্যালোচনা করেন। এই আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল জুলাই জাতীয় সনদ এবং সংস্কার প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, যা দেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সরকারের এই অনড় অবস্থান একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার ইঙ্গিত বহন করছে, যা দ্রুত বাস্তবায়নে তারা বদ্ধপরিকর।
রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত ও চলমান অস্থিরতা
সুপারিশ জমা পড়ার পর থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জোরালোভাবে এই মত প্রকাশ করেছে যে, সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির কোনো এখতিয়ার নেই। দলটি আরও মনে করে যে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠানের প্রস্তাবনা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীসহ আরও আটটি রাজনৈতিক দল নভেম্বর মাসের মধ্যে গণভোটসহ তাদের পাঁচটি মূল দাবিতে জোরদার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট (এনসিপি) এর মতো দলগুলো জুলাই সনদের বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং এরপরই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। এর আগে থেকেই সংস্কার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতপার্থক্য বিদ্যমান ছিল, ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে আরও তীব্রভাবে জনসম্মুখে এসেছে। এই পরিস্থিতি দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে আরও জটিল করে তুলছে।
আরপিও সংশোধনী: জোট রাজনীতির নতুন দিক
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে যে, সম্প্রতি অনুমোদন দেওয়া নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অন্তর্বর্তী সরকার আবারও সংশোধন করতে যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত দেশের নির্বাচনী জোটগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে আসবে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যদি কোনো রাজনৈতিক জোট একত্রে নির্বাচন করে, তবে জোটের অন্তর্ভুক্ত প্রার্থীরা নিজের দলের প্রতীক ব্যবহার করার বাধ্যবাধকতার বাইরে চলে আসবেন। অর্থাৎ, কোনো প্রার্থী চাইলে তার নিজ দলের প্রতীক অথবা জোটের যেকোনো দলের প্রতীক ব্যবহার করে নির্বাচন করতে পারবেন। এই পরিবর্তন জোটভুক্ত দলগুলোর নির্বাচনী কৌশল এবং প্রচারণায় আরও নমনীয়তা আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে আসন্ন নির্বাচনে জোটের প্রার্থীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, কারণ এর ফলে তারা জোটের সবচেয়ে পরিচিত বা জনপ্রিয় প্রতীক ব্যবহার করে ভোটারদের কাছে সহজে পৌঁছাতে পারবেন। এই সংশোধনী জোটগত নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল এবং কার্যকরী করে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে গত ২৩ অক্টোবর এ সংক্রান্ত আলোচনার সূত্রপাত হলেও, বর্তমানে এটি একটি নতুন মাত্রায় পৌঁছালো।
