বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমকর্মীদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিশ্বের সকল দেশের সরকারের প্রতি তীব্র আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতি বছর ২ নভেম্বর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হয়, আর এই দিনটিতেই তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি তুলে ধরেছেন।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মহাসচিব উল্লেখ করেন যে, সত্যের সন্ধানে প্রতিনিয়ত নিয়োজিত গণমাধ্যমকর্মীরা আজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমবর্ধমান বিপদের সম্মুখীন। এই বিপদসমূহের মধ্যে রয়েছে শুধু মৌখিক নিপীড়ন বা আইনি হুমকিই নয়, বরং শারীরিক আক্রমণ, অন্যায় কারাবাস, নির্যাতন এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাঁদের জীবন হারানোর মতো মর্মান্তিক ঘটনাও। গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর এমন হামলা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মূল ভিত্তিকেই দুর্বল করে দেয় এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
আন্তোনিও গুতেরেস তাঁর বিবৃতিতে ন্যায়বিচারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, “সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা দৃঢ়ভাবে ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি।” তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান যে, বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় দশটি ঘটনার মধ্যে নয়টিরই বিচার আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধীদের আরও উৎসাহিত করছে এবং নির্ভীক সাংবাদিকতাকে দমিয়ে রাখছে, যা গণতন্ত্রের জন্য এক অশনি সংকেত।
বর্তমান বিশ্বে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ ও বিপজ্জনক স্থানে পরিণত হয়েছে বলে জাতিসংঘ মহাসচিব মন্তব্য করেছেন। গাজায় সাংবাদিকরা যে ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছেন, তা নজিরবিহীন। তিনি এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য পুনরায় জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তোনিও গুতেরেস আরও বলেন, “যেকোনো স্থানে বিচারহীনতা কেবল ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি এক চরম হুমকি।” তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, সকল সরকারেরই প্রতিটি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করা এবং সাংবাদিকরা যেন সর্বত্র স্বাধীনভাবে ও নির্ভয়ে তাঁদের কাজ করতে পারেন, সেই পরিবেশ তৈরি করা অপরিহার্য দায়িত্ব।
জাতিসংঘ মহাসচিব বিশেষ করে নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণের বিষয়টি মোকাবিলা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না, যা নারী সাংবাদিকদের জন্য অনলাইন পরিসরকে অনিরাপদ করে তুলছে এবং তাঁদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে। এই সমস্যাগুলো সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা না করলে একটি স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
