নিউইয়র্কের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। ঐতিহাসিক এক বিজয়ে নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জোহরান মামদানি, যিনি শহরটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। এই যুগান্তকারী সাফল্যের আবহে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক বিস্ফোরক মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তিনি মামদানিকে সমর্থন দেওয়া ইহুদি ভোটারদের ‘স্টুপিড’ বলে অভিহিত করে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য ও তার প্রতিক্রিয়া
বুধবার (৫ নভেম্বর) নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এক পোস্টের মাধ্যমে ট্রাম্প এই কড়া মন্তব্যটি করেন। তার লেখায় স্পষ্টভাবে উঠে আসে যে, যেসব ইহুদি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী মামদানিকে ভোট দিয়েছেন, তাদের তিনি ‘বোকা’ এবং ‘ইহুদি বিদ্বেষী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ট্রাম্পের মতে, তাদের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি জনগোষ্ঠীর স্বার্থের পরিপন্থী এবং তাদের বিরুদ্ধেই যাবে। এই ধরনের উসকানিমূলক মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে তাৎক্ষণিকভাবে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। অনেকে এটিকে বিভাজনমূলক এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন, যা আমেরিকার বহুত্ববাদী সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের পূর্ববর্তী হুঁশিয়ারি
নির্বাচনের আগেও ডোনাল্ড ট্রাম্প জোহরান মামদানির প্রার্থিতার বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি তৎকালীন সময়ে আরেক ডেমোক্র্যাট নেতা অ্যান্ড্রু কুমোকে সমর্থন করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। এমনকি, মামদানি মেয়র নির্বাচিত হলে নিউইয়র্ক শহরের জন্য বরাদ্দ কেন্দ্রীয় অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার মতো গুরুতর হুমকিও দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তার এই হুমকিকে অনেকে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে দেখেছিলেন, যা শহরটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারতো এবং নির্বাচিত সরকারের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপের শামিল ছিল।
জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক বিজয়
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বেসরকারি ফলাফলে ডেমোক্রেট প্রার্থী জোহরান মামদানি নিউইয়র্কের মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন। এই বিজয় তাকে নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়রের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে, যা শহরের বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। তিনি স্বাধীন প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমোকে পরাজিত করে এই ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেন। গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক হিসেবে পরিচিত মামদানি তার নির্বাচনী প্রচারণায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে জোর দিয়েছিলেন এবং সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার ছিলেন।
নির্বাচনী আবহাওয়া ও রেকর্ডসংখ্যক ভোট
এবারের নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে অভূতপূর্ব জনজোয়ার দেখা যায়। প্রায় সাত লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ জন ভোটার আগাম ভোট প্রদান করেন, যা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ব্যতীত অন্যান্য নির্বাচনে নিউইয়র্ক শহরে পড়া সর্বোচ্চ আগাম ভোটের রেকর্ড। এই বিপুল সংখ্যক আগাম ভোট শহরের নাগরিকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সচেতনতা ও সক্রিয়তার ইঙ্গিত দেয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণের এই মাত্রা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। স্থানীয় সময় গতকাল সকাল ৬টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে রাত ৯টায় শেষ হয় (বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার সকাল ৮টা)।
মামদানির প্রতিশ্রুতি ও জনসমর্থন
নির্বাচনী প্রচারণায় জোহরান মামদানি বিশেষ করে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা তরুণসহ সব বয়সের ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তার এই প্রতিশ্রুতি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোকে সরাসরি তুলে ধরেছিল এবং ব্যাপক জনসমর্থন অর্জন করেছিল। শহরের অ্যাস্টোরিয়া এলাকার একটি কেন্দ্রে তিনি নিজেও ভোট দেন। ভোটকেন্দ্রে তার প্রতি মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন তার জনপ্রিয়তারই প্রতিফলন ঘটায় এবং ইঙ্গিত দেয় যে ভোটাররা তার প্রগতিশীল নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহণ করেছেন।
