ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস গাজায় বন্দী থাকা আরও একজন ইসরাইলি নাগরিকের মৃতদেহ ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে গত বুধবার রেডক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির তত্ত্বাবধানে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যা চলমান সংঘাতের মাঝে এক সংবেদনশীল মানবিক দিককে তুলে ধরে। গণমাধ্যম আলজাজিরার প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
দেহাবশেষ হস্তান্তর প্রক্রিয়া ও চুক্তির শর্তাবলি
সর্বশেষ এই হস্তান্তরের মাধ্যমে হামাসের জিম্মায় থাকা ইসরাইলি বন্দিদের মোট ২২টি মৃতদেহ ইসরাইলের কাছে ফেরত দেওয়া হলো। যুদ্ধবিরতির শর্তানুযায়ী, হামাস আরও ছয়টি মৃতদেহ হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই মৃতদেহগুলোর মধ্যে ইসরাইলি নাগরিকদের পাশাপাশি একজন থাই এবং একজন নেপালি নাগরিকের দেহাবশেষও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা সংঘাতের বৈশ্বিক প্রভাবকে নির্দেশ করে। স্মরণীয় যে, বর্তমান যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনেই হামাস গত মাস থেকে ধাপে ধাপে মৃত ইসরাইলিদের দেহাবশেষ হস্তান্তর করে আসছে। উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনটি মোট ২৮ জন মৃত জিম্মির দেহ ইসরাইলের কাছে ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছিল।
অভিযোগ ও পাল্টা যুক্তি: বিলম্বের কারণ
তবে এই প্রক্রিয়া নিয়ে ইসরাইল বারবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, হামাস ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত বন্দিদের দেহাবশেষ ফেরাতে বিলম্ব করছে, যা তাদের পরিবারের জন্য চরম মানসিক যন্ত্রণার কারণ হচ্ছে। এর বিপরীতে, হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, গাজায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর ব্যাপক বোমা হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণে বহু মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে সকল দেহাবশেষ খুঁজে বের করা এবং শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন ও সময়সাপেক্ষ কাজ।
যুদ্ধবিরতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপট ও বন্দিবিনিময়
এই চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির মূল শর্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল বন্দিবিনিময়। এর অংশ হিসেবে, হামাসের হাতে থাকা জীবিত ও মৃত জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইল ধাপে ধাপে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি ও আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দিয়েছে। এছাড়া, এই চুক্তির আওতায় গাজায় সামরিক অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয় এবং অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে অত্যাবশ্যকীয় মানবিক সহায়তা প্রবেশের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা যুদ্ধপীড়িত মানুষের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি বয়ে আনে।
ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি: পারস্পরিক অভিযোগ
দুঃখজনকভাবে, এই ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখা নিয়ে উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে পালটাপালটি অভিযোগ তুলেছে। ইসরাইল অভিযোগ করছে যে হামাস চুক্তির শর্তাবলি লঙ্ঘন করেছে, অন্যদিকে হামাসের দাবি, যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা সত্ত্বেও ইসরাইলি বাহিনী গাজার বিভিন্ন অংশে বেশ কয়েকবার সামরিক হামলা চালিয়েছে, যা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই পারস্পরিক দোষারোপের ফলে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, এবং গাজার পরিস্থিতি এখনো চরম অস্থিতিশীল রয়ে গেছে।
