More

    ফিলিপাইনে তাণ্ডবের পর ভিয়েতনামে ঘূর্ণিঝড় কালমায়েগির আঘাত, ৩ জনের মৃত্যু

    দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিধ্বংসী রূপে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় কালমায়েগি। গতকাল বৃহস্পতিবার ভিয়েতনামের উপকূলে আছড়ে পড়ার পর এটি কমপক্ষে তিনজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগটি এখন কম্বোডিয়া ও লাওসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যা নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এর আগে, ফিলিপাইনে কালমায়েগির তাণ্ডবে ১১৪ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান এবং বহু শহর ও জনপদ জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এই ঘূর্ণিঝড়টি তার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা নিয়ে গোটা অঞ্চলজুড়ে এক গভীর সংকটের বার্তা দিচ্ছে।

    ভিয়েতনামের মধ্যাঞ্চলীয় উপকূলে কালমায়েগি তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে আঘাত হানে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১৪৯ কিলোমিটার (৯২ মাইল)। এই ভয়ংকর গতিতে বয়ে যাওয়া ঝোড়ো বাতাস উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যম এবং সরকারি অনলাইন পোর্টালগুলো জানিয়েছে, দেশের নিরাপত্তা ও উদ্ধারকারী বাহিনী দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার সেনাসদস্যকে সম্ভাব্য উদ্ধার ও ত্রাণ অভিযানের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যা সরকারের দুর্যোগ প্রস্তুতিতে উচ্চ অগ্রাধিকারের ইঙ্গিত দেয়।

    ভিয়েতনাম সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। কালমায়েগির আঘাতের ফলে দেশের ছয়টি বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে শতাধিক ফ্লাইট বাতিল অথবা বিলম্বিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটিয়েছে। উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত হানার পূর্বেই গত এক সপ্তাহ ধরে ভিয়েতনামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত ইতোমধ্যেই দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করেছিল, যা ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

    ভিয়েতনামে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব

    ভিয়েতনামের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, ঘূর্ণিঝড় কালমায়েগি দেশটির স্থলভাগে প্রবেশ করে মূলত দাক লাকগিয়া লাই প্রদেশ দুটিতে তার ধ্বংসাত্মক আঘাত হেনেছে। গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ২৯ মিনিটে এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি ভিয়েতনামের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর জরুরি সতর্কতা জারি করে জানিয়েছে যে, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেশের সাতটি শহর এবং বিভিন্ন প্রদেশের শতাধিক অঞ্চল ব্যাপক বন্যা ও ভূমিধসের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতায় বহু ঘরবাড়ির ছাদ উপড়ে গেছে, কাঁচা ও আধাপাকা নির্মাণগুলি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এছাড়া, ঝোড়ো বাতাসের তাণ্ডবে অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, যা ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে।

    জরুরি প্রস্তুতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

    ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ভয়াবহতা অনুধাবন করে গত বুধবার সকাল থেকেই ভিয়েতনামের উপকূলীয় অঞ্চলের কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার জন্য নিরন্তর আহ্বান জানিয়েছেন। এই দুর্যোগ মুহূর্তে ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন একটি জরুরি অনলাইন বৈঠকে বসেন। সেখানে তিনি কঠোর নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই দেশের প্রতিটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছাতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোনো ব্যক্তিই খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি অথবা অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছাড়া না থাকেন। এই কঠিন সময়ে কেউ যেন ক্ষুধার্ত বা অসহায় অবস্থায় না পড়েন, তা নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সরকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার প্রতিফলন ঘটায়।

    ফিলিপাইনে পূর্ববর্তী ধ্বংসযজ্ঞ ও পরবর্তী আশঙ্কা

    ভিয়েতনামে আঘাত হানার পূর্বে ঘূর্ণিঝড় কালমায়েগি তার ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে ফিলিপাইনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। সেখানে এর আঘাতে কমপক্ষে ১১৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতাকে প্রকটভাবে তুলে ধরেছে। ফিলিপাইনে ঘূর্ণিঝড়টি বহু শহর ও জনপদকে গভীরভাবে প্লাবিত করে এক ব্যাপক মানবিক সংকটের জন্ম দিয়েছিল। সেখানকার ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা মাথায় রেখে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওসের মতো দেশগুলো এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। ঘূর্ণিঝড়টি যেহেতু এখন কম্বোডিয়া ও লাওসের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এই দুটি দেশও কালমায়েগির সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক প্রভাবের শিকার হতে পারে। আঞ্চলিক দেশগুলো দুর্যোগ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুতি আরও জোরদার করছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here