More

    ইরানে ইসরায়েলি হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেন ট্রাম্প

    ইরান ভূখণ্ডে ইসরায়েলের হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পূর্বে এই হামলাকে ইসরায়েলের একক সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করা হলেও, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে ওয়াশিংটনের কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তনের এক স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এই স্বীকারোক্তি কেবল অতীতের বিবৃতিকেই নাকচ করেনি, বরং মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব এবং নীতি নিয়েও নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে, যা কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে।

    ট্রাম্পের অকপট স্বীকারোক্তি: ইসরায়েলে হামলার দায় নিজের

    বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছেন যে, ইসরায়েলের ইরান হামলা তার নির্দেশেই হয়েছিল। তিনি বলেন, “ইসরায়েল প্রথমে হামলা চালায়। সেই হামলা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। আমি পুরোপুরি এই হামলার দায়িত্বে ছিলাম।” তার এই উক্তি পূর্বে ঘোষিত মার্কিন অবস্থান থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, যেখানে বলা হয়েছিল ইসরায়েল নিজস্ব উদ্যোগেই এই অভিযান পরিচালনা করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা ছিল না। ট্রাম্প আরও যোগ করেন, “হামলার প্রথম দিন ইসরায়েলের জন্য একটি অসাধারণ দিন ছিল। কারণ, অন্যান্য হামলার তুলনায় সেদিন সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।” এই মন্তব্য কেবল হামলার দায় স্বীকারই করেনি, বরং এর ব্যাপকতা ও ফলাফলের প্রতিও তার সমর্থনকে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরেছে, যা বিশ্লেষকদের কাছে গভীর তাৎপর্য বহন করছে।

    সংঘর্ষের প্রেক্ষাপট ও বিধ্বংসী হামলা

    মূলত, গত ১৩ জুন ইসরায়েল বিনা উসকানিতে ইরানের উপর এক বিধ্বংসী সামরিক আক্রমণ চালায়। এই হামলায় ইরানের বহু উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং বেসামরিক নাগরিক নির্মমভাবে নিহত হন। এই নজিরবিহীন আগ্রাসন মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়। ইসরায়েলের এই আকস্মিক ও ব্যাপক হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয় এবং তেহরানের পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিশোধের হুমকি আসে। এই হামলার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে যারা ছিলেন, তাদের তালিকা এবং ক্ষতির পরিমাণ পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিশদভাবে উঠে আসে, যা পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তোলে।

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তন ও ইরানের জবাব

    ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান বসে থাকেনি। তারা ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যা দু’দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করে। এই উত্তেজনার পারিপার্শ্বিকতায় যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিক অস্বীকৃতি সত্ত্বেও যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি যোগ দেয়। ওয়াশিংটন ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। যুদ্ধের প্রথম দিনগুলোতে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে আসছিল যে, ইসরায়েল সম্পূর্ণ নিজস্ব সিদ্ধান্তে হামলা চালিয়েছে এবং এই বিষয়ে তাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। একই সময়ে, তেহরানকে কঠোর ভাষায় সতর্ক করা হয়েছিল যেন ওই অঞ্চলে অবস্থানরত মার্কিন সেনা এবং তাদের স্বার্থের উপর কোনো রকম প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো না হয়। সে সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, “আজ রাতে ইসরায়েল ইরানের ওপর এককভাবে হামলা চালিয়েছে। আমরা এ হামলার সঙ্গে যুক্ত নই। আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো ওই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীকে সুরক্ষা দেওয়া।” ট্রাম্পের সাম্প্রতিক স্বীকারোক্তি মার্কো রুবিও-এর সেই পূর্বতন বিবৃতিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণ করে এবং মার্কিন প্রশাসনের দ্বৈত নীতির মুখোশ উন্মোচন করে।

    যুদ্ধবিরতি এবং ট্রাম্পের বিজয় দাবি

    দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সামরিক সংঘাত একপর্যায়ে এসে যুদ্ধবিরতির দিকে মোড় নেয়, যখন ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই ঘটনা উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত করতে সাহায্য করে এবং পরবর্তীতে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকরা হয়। এরপর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধের ফলাফলের কৃতিত্ব নিজের দিকে টানার চেষ্টা করে আসছেন। তিনি বারবার দাবি করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস’ করেছে এবং তিনি এই বিষয়টিকে তার প্রশাসনের একটি বড় কৌশলগত সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছেন। তার এই দাবিগুলো মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ভূমিকা এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নীতি নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহলে যথেষ্ট আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here