অধিকৃত পশ্চিম তীরে সম্প্রতি সংঘটিত অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা একটি মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক নিন্দার জন্ম দিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা যখন রেকর্ড মাত্রায় বাড়ছে, ঠিক তখনই এই জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হলো, যা এই অঞ্চলের ভঙ্গুর পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তুলেছে। এই ঘটনা কেবল একটি উপাসনালয়ের উপর হামলা নয়, বরং এটি ফিলিস্তিনি জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবিক মর্যাদার উপর প্রত্যক্ষ আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মসজিদে অগ্নিসংযোগ: বিশদ বিবরণ
স্থানীয় বাসিন্দারা আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত সালফিত এলাকার কাছে দেইর ইস্তিয়া গ্রামের হাজ্জা হামিদা মসজিদে আগুন দেয়। ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত ছবিগুলোতে দেখা যায়, মসজিদের দেয়ালগুলোতে স্প্রে ব্যবহার করে বর্ণবিদ্বেষী এবং ফিলিস্তিনবিরোধী স্লোগান লেখা হয়েছে, যা আক্রমণকারীদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। এই হামলায় মসজিদের ভেতরের অংশ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দুঃখজনকভাবে, পবিত্র কোরআনের কিছু কপিও পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এই ধরনের বর্বরোচিত কাজ মুসলিম বিশ্বের অনুভূতিতে গভীর আঘাত হেনেছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সহিংসতা ও বর্বরতার বিস্তার
ফিলিস্তিনের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে একটি ‘জঘন্য অপরাধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, এই আক্রমণের মাধ্যমে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের পবিত্র স্থানগুলোকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বর্বরতার এক নতুন মাত্রা উন্মোচিত হয়েছে। এটি শুধু একটি উপাসনালয়ের উপর হামলা নয়, বরং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মপরিচয় ও সংস্কৃতি মুছে ফেলার একটি ধারাবাহিক অপচেষ্টা।
ওয়াফা সংবাদ সংস্থা আরও একটি দুঃখজনক ঘটনার খবর জানিয়েছে। ওই ঘটনার বাইরে পশ্চিম তীরের দক্ষিণে হেবরনের কাছে বেইত উম্মার শহরে গতকাল এক অভিযানের সময় ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালালে দুই ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়। নিরপরাধ শিশুদের উপর এমন হামলা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসী ও অমানবিক কর্মকা্ণ্ডকে আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে।
জলপাই চাষের মৌসুম ঘিরে রেকর্ডসংখ্যক হামলা
এই সমস্ত সহিংস ঘটনা এমন সময়ে ঘটছে, যখন চলতি বছর পশ্চিম তীরজুড়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ও সেনাদের হামলার সংখ্যা রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে। এসব হামলার একটি বড় অংশ সংঘটিত হচ্ছে ২০২৫ সালের জলপাই চাষের মৌসুমকে কেন্দ্র করে। জলপাই গাছ ফিলিস্তিনি কৃষকদের আয়ের প্রধান উৎস এবং তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা এই জলপাই বাগানগুলো ধ্বংস করে বা সেখানে প্রবেশে বাধা দিয়ে ফিলিস্তিনিদের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে এবং তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সংস্থা (OCHA) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির একটি চিত্র তুলে ধরেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে যে, গত ১ অক্টোবর থেকে জলপাই চাষকে কেন্দ্র করে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের চালানো কমপক্ষে ১৬৭টি হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব হামলায় ১৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এই পরিসংখ্যান ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান আগ্রাসনের ভয়াবহতা এবং তাদের জীবনে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে।
