More

    ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় নিজেই নজরদারি যন্ত্র নষ্ট করতে প্ররোচিত হয়েছিলেন: দাবি বলসোনারোর

    ব্রাজিলের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন মোড় নিয়ে এসেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো। সম্প্রতি নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়ার পর আদালতের কাছে তিনি এক বিস্ময়কর দাবি করেছেন। বলসোনারো বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে সেবন করা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলেই তাঁর মধ্যে অযৌক্তিক সন্দেহপ্রবণতা ও বিভ্রমের সৃষ্টি হয়েছিল। আর এই মানসিক অবস্থার কারণেই তিনি তাঁর পায়ে যুক্ত থাকা ইলেকট্রনিক নজরদারি যন্ত্রটি নষ্ট করার জন্য প্ররোচিত হয়েছিলেন।

    বলসোনারোর দাবি: ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সন্দেহবাতিক

    আদালতের নথি অনুযায়ী, সাবেক এই রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার অভিযোগ ওঠার পর পুলিশ তাঁকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়। এর ঠিক একদিন পরেই এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসে। বলসোনারো বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন যে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে হেঁচকির সমস্যায় ভুগছিলেন। এই জটিল সমস্যার চিকিৎসায় চিকিৎসকেরা তাঁকে অ্যান্টিকনভালসেন্ট জাতীয় কিছু ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, এই ওষুধগুলোর বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জেরেই তিনি অবাস্তব বিভ্রম এবং গভীর সন্দেহবাতিকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন

    সাবেক প্রেসিডেন্ট দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, এই অসুস্থ মানসিক অবস্থার কারণেই তিনি অযৌক্তিকভাবে সন্দেহ করতে শুরু করেন যে, তাঁর গতিবিধি পর্যবেক্ষণকারী ইলেকট্রনিক যন্ত্রটির ভেতরে একটি কথা শোনার যন্ত্র (লিসেনিং ডিভাইস) স্থাপন করা আছে। তাঁর এই উদ্ভট সন্দেহপ্রবণতাই তাঁকে পায়ের গোড়ালিতে যুক্ত নজরদারি যন্ত্রটি ক্ষতিগ্রস্ত করার দিকে ঠেলে দেয় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

    আইনি জটিলতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

    ব্রাজিলের এই প্রভাবশালী ডানপন্থী নেতা ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী নেতা লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে পরাজিত হন। এরপর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ ওঠে। অভ্যুত্থানের পরিকল্পনায় জড়িত থাকার দায়ে গত সেপ্টেম্বরে তাঁকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যা বর্তমানে আপিল প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এই দীর্ঘ কারাদণ্ড ব্রাজিলিয়ান রাজনীতিতে এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

    গৃহবন্দী দশা এবং বিতর্কিত নজরদারি

    বলসোনারো ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে গৃহবন্দী অবস্থায় ছিলেন। গত শনিবার ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েস তাঁকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। বিচারপতি মোরায়েস আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, বলসোনারো হয়তো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন, যা তাঁর গ্রেপ্তারের মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

    গতকাল রবিবার তাঁর বিরুদ্ধে একটি ৩০ মিনিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে ৭০ বছর বয়সী এই সাবেক প্রেসিডেন্ট তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা পালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি আরও দাবি করেন যে, তাঁর গৃহবন্দী দশা থেকে পালানোর কোনো অভিপ্রায় তাঁর ছিল না এবং তিনি কখনোই স্বেচ্ছায় নিজের পায়ের গোড়ালিতে যুক্ত থাকা নজরদারি যন্ত্রটি সরানোর চেষ্টা করেননি। তিনি পুনর্বার উল্লেখ করেন যে, ঘটনার সময় তিনি একাই ছিলেন। তাঁর মেয়ে, বড় ভাই এবং একজন পরামর্শক কেউই তখন বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না, যা তাঁর একক মানসিক বিভ্রান্তির অবস্থাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here