প্রশান্ত মহাসাগরে সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী একটি নৌকায় মার্কিন বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র এবং কলম্বিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন এক নতুন মাত্রা লাভ করেছে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকে উদ্দেশ্য করে মার্কিন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কঠোর মন্তব্যে দুই দেশের সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে ধাবিত হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায়, কলম্বীয় প্রেসিডেন্টও নিজের অবস্থানে অনড় থেকে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘটনা উভয় দেশের মধ্যে গভীর উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন হামলা ও প্রাণহানি:
গত বুধবার প্রশান্ত মহাসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্দেহভাজন মাদকবাহী একটি নৌকায় অভিযান চালায়, যেখানে পাঁচজন নিহত হন। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কে এক গভীর ফাটল তৈরি করে এবং এর জেরে কলম্বিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। মার্কিন কর্তৃপক্ষ এই অভিযানকে মাদক চোরাচালান দমনের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে দাবি করলেও, কলম্বিয়া এটিকে তাদের সার্বভৌমত্বের ওপর গুরুতর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করেছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই প্রভাবশালী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকে উদ্দেশ্য করে অত্যন্ত আপত্তিকর ও ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কলম্বিয়ার সামরিক বাহিনী এবং পুলিশ প্রশাসন এখনো আমেরিকা-পন্থী। সেখানকার একমাত্র সমস্যা হলো একজন উন্মাদ প্রেসিডেন্ট।” রুবিও তার মন্তব্যে আরও যোগ করেন, “ওই ব্যক্তিটি সম্পূর্ণ উন্মাদ এবং মানসিকভাবে তিনি স্থিতিশীল নন।” রুবিওর এই তীক্ষ্ণ এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে, যার ফলে ওয়াশিংটন ও বোগোতার মধ্যে যোগাযোগে চরম টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে এবং পারস্পরিক অবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে।
ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান ও সামরিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা
একইভাবে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্রোর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি পেত্রোকে সরাসরি ‘গুন্ডা’ বলে আখ্যায়িত করেন এবং ইঙ্গিত দেন যে, পেত্রো সম্ভবত নিজেই মাদক পাচার চক্রের সাথে জড়িত এবং নিজের দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন। এই গুরুতর অভিযোগের পাশাপাশি ট্রাম্প আরও ঘোষণা করেন যে, কলম্বিয়াকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত সামরিক সহায়তা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা হবে। এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ এবং অপমানজনক মন্তব্য অতীতে দুই দেশের সুসম্পর্কের ওপর মারাত্মক আঘাত হানার সামিল, যা বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের আইনি প্রতিরোধের অঙ্গীকার
মার্কিন প্রশাসনের এই ধরনের অবিরাম ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং গুরুতর অভিযোগের মুখে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো নীরব থাকেননি। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সহায়তা নিয়ে নিজেকে আইনগতভাবে রক্ষা করবেন। পেত্রোর এই ঘোষণা ইঙ্গিত দেয় যে, কলম্বিয়া এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পিছপা হবে না এবং তাদের সম্মান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আন্তর্জাতিক আইনি ফোরামেও সরব হতে প্রস্তুত। এই ঘটনা একদিকে যেমন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের গভীর সংকট তুলে ধরেছে, তেমনি অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও সামরিক সহায়তার মতো বিষয়গুলো কীভাবে সংঘাতকে আরও উসকে দিতে পারে, তার একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের কূটনৈতিক সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।
