More

    লিবিয়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা: আইওএম প্রধান

    উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে লিবিয়া অভিবাসীদের জন্য এক বিভীষিকাময় রূপ ধারণ করেছে, যেখানে তাদের জীবন পাচারকারী ও সশস্ত্র মিলিশিয়াদের নির্মম শিকার। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর মহাপরিচালক অ্যামি পোপ সম্প্রতি এই মর্মান্তিক পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন, যা বিশ্বজুড়ে মানবপাচার ও নির্যাতনের এক অন্ধকার দিক উন্মোচন করে। তার মতে, লিবিয়াতেই অভিবাসীরা সবচেয়ে ভয়াবহ ও অমানবিক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন।

    ভূমধ্যসাগরের বিপজ্জনক যাত্রা এবং লিবিয়ার বিভীষিকা

    মরক্কোর রাজধানী রাবাতে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে অ্যামি পোপ জোর দিয়ে বলেন যে, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে যেসব অভিবাসীর মর্মান্তিক সলিল সমাধি ঘটেছে, তাদের অধিকাংশই লিবিয়ার উপকূল থেকে বিপজ্জনক যাত্রা শুরু করেছিলেন। এই সমুদ্রপথটি কেবল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণই নয়, যারা এখনও যাত্রা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তারাও প্রতিটি মুহূর্তে ভয়াবহ বিপদের মুখে রয়েছেন। ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর স্বপ্ন বহু মানুষের জন্য এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে, যার মূল কারণ লিবিয়ার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং মানবপাচারকারীদের দৌরাত্ম্য।

    অপহরণ, মুক্তিপণ এবং অবর্ণনীয় নির্যাতন

    লিবিয়ার মাটিতে অভিবাসীরা নিয়মিতভাবে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি, পাশবিক নির্যাতন এবং ভয়াবহ হামলার শিকার হচ্ছেন। আইওএম মহাপরিচালক নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানান, অসংখ্য অভিবাসীর কাছ থেকে তিনি সরাসরি শুনেছেন কীভাবে তারা সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে আটক হয়েছেন এবং মুক্তিপণের জন্য অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই অভিবাসীদের হৃদয়বিদারক কাহিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের এক চরম চিত্র তুলে ধরে, যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার পদদলিত হচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, লিবিয়া পাচারকারীদের কবলে পড়া অভিবাসীদের জন্য এক অত্যন্ত বিপজ্জনক ও অনিশ্চিত আশ্রয়স্থল। এই অসহায় মানুষদের মধ্যে শুধু আফ্রিকার দেশগুলো থেকেই নয়, বরং এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও আগত বহু অভিবাসী রয়েছেন, যারা উন্নত জীবনের সন্ধানে এসে এখানে অমানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

    ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর নীতি এবং লিবিয়ার অস্থিতিশীলতা

    ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ নীতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই নীতিগুলোর ফলস্বরূপ, বহু অভিবাসী অনির্দিষ্টকালের জন্য লিবিয়ার ভূখণ্ডেই আটকা পড়েছেন, যা তাদের দুর্দশাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। লিবিয়ার কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত দেশটিতে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা বিস্ময়করভাবে ৪০ লাখ পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা দেশের ওপর এক বিশাল চাপ সৃষ্টি করেছে এবং মানবিক সংকটকে গভীরতর করেছে।

    ২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহের মাধ্যমে তৎকালীন নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই লিবিয়া গভীর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ভুগছে। এই অস্থিতিশীল পরিবেশ মানবপাচারকারীদের জন্য এক উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করেছে, যেখানে তারা নির্বিঘ্নে তাদের অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে। আইনের শাসনের অভাব এবং নিয়ন্ত্রণের অনুপস্থিতি অভিবাসীদের নিরাপত্তা ও জীবনকে চরম ঝুঁকিতে ফেলছে।

    যদিও লিবিয়ায় অভিবাসীদের এই মর্মান্তিক দুর্দশা কোনো নতুন ঘটনা নয়, তবে ২০২৩ সালেও এর ভয়াবহতা বিন্দুমাত্র কমেনি, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here