ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক সংঘাতের ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) এবং প্রতিবেশী দেশ ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছে ভেনেজুয়েলা। কারাকাসের দাবি, এই দুই শক্তি যৌথভাবে একটি ‘ফলস-ফ্ল্যাগ’ বা ভুয়া হামলার নাটক মঞ্চস্থ করার মাধ্যমে এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই বিস্ফোরক অভিযোগ আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই গুরুতর অভিযোগ এমন এক সংবেদনশীল সময়ে এলো যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো ভেনেজুয়েলার জলসীমার অত্যন্ত কাছাকাছি একটি যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা করছে, যা ভেনেজুয়েলার কাছে চরম উস্কানিমূলক বলে বিবেচিত হচ্ছে।
ভেনেজুয়েলার ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেজ সম্প্রতি, ২৬শে অক্টোবর, রোববার, এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনেন। তিনি জানান, ভেনেজুয়েলার নিরাপত্তা বাহিনী একদল ভাড়াটে যোদ্ধাকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে, যাদের কাছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সরাসরি তথ্য ও নির্দেশনা ছিল। এই ঘটনাটি আঞ্চলিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
রদ্রিগেজ তার অভিযোগে আরও বিস্তারিত উল্লেখ করে বলেন যে, ওই ভাড়াটে দলটি ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর সীমান্তবর্তী জলসীমা অথবা ভেনেজুয়েলার ভূখণ্ডের ভেতর থেকে একটি সুপরিকল্পিত ‘ফলস-ফ্ল্যাগ হামলা’ চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। এই ধরনের হামলা সাধারণত সংঘাতের অজুহাত তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তোলে।
ফলস-ফ্ল্যাগ অপারেশন: একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা
মূলত, ‘ফলস-ফ্ল্যাগ অপারেশন’ বলতে এমন এক কৌশলগত কর্মকাণ্ডকে বোঝায়, যা অত্যন্ত সুচারুভাবে এমনভাবে সাজানো হয় যেন মনে হয় অন্য কোনো পক্ষ বা সত্তা এর জন্য দায়ী। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, একটি কৃত্রিম বা মিথ্যা অজুহাত তৈরি করে নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার বা বৃহত্তর সামরিক সংঘাতের প্রেক্ষাপট প্রস্তুত করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। এই ধরনের অভিযান প্রায়শই আন্তর্জাতিক আইনে চরম অস্থিতিশীলতা ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করে।
রদ্রিগেজ অত্যন্ত কঠোরভাবে সতর্ক করে বলেন যে, এই কথিত ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত এবং ভয়াবহ উদ্দেশ্য ছিল ভেনেজুয়েলার সঙ্গে একটি ‘পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘাত’ সৃষ্টি করা, যা শুধু ভেনেজুয়েলা নয়, সমগ্র ক্যারিবীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলবে।
তবে, ভেনেজুয়েলার পক্ষ থেকে প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে আটককৃত ব্যক্তিদের পরিচয়, তাদের উদ্দেশ্য বা ঘটনার প্রমাণস্বরূপ সুনির্দিষ্ট বিস্তারিত তথ্য এখনো পর্যন্ত জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। এই তথ্যের অভাব অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কিছু প্রশ্ন তৈরি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র-ত্রিনিদাদ সামরিক মহড়া: উত্তেজনার প্রেক্ষাপট
ভেনেজুয়েলার এই গুরুতর অভিযোগ এমন সময়ে এল যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো ক্যারিবীয় সাগরে একটি বৃহৎ যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা করছে। ওয়াশিংটন এই মহড়াকে ‘আঞ্চলিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা’ জোরদার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বর্ণনা করলেও, কারাকাস এটিকে তাদের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছে। ভেনেজুয়েলার কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই মহড়া কেবল আঞ্চলিক সহযোগিতার আড়ালে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি জানান দেওয়া এবং ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আগ্রাসনের প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করছে। এই ধরনের মহড়া আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও তীব্রতর করে তুলেছে এবং সংঘাতের আশঙ্কা বৃদ্ধি করেছে।
সামগ্রিকভাবে, ভেনেজুয়েলার এই গুরুতর অভিযোগ এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে বড় শক্তির সামরিক মহড়া—এই সবকিছু মিলিয়ে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এক নতুন ও জটিল চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল এই পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে।
