মার্কিন রাজনীতিতে বিতর্ক আর জল্পনা যেন অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি তার কার্যকালের শুরু থেকেই নানা চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন, সম্প্রতি আবারও এমনই এক বার্তা দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে ঢেউ তুলেছেন। ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে তার ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে নানান গুঞ্জন ডানা মেলছে, বিশেষ করে তার তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা ঘিরে। এই জল্পনা এমন এক সময়ে উঠেছে যখন মার্কিন সংবিধানের কঠোর নিয়মাবলী বারবার স্মরণে আসছে, যা একজন রাষ্ট্রপতির কার্যকালের সীমা নির্ধারণ করে।
ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য ও জল্পনা
গত সোমবার এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায়, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি ২০২৮ সালের নির্বাচনে উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য লড়বেন না। তবে, তার এই স্পষ্টভাষিতার বিপরীতে, তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা, সেই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত মন্তব্য করতে রাজি হননি। এর ফলে মার্কিন রাজনৈতিক মহলে তার ক্ষমতা বৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ নিয়ে দীর্ঘদিনের জল্পনা আরও সুদূরপ্রসারী হলো। ক্ষমতা থাকাকালীন সময়েও ট্রাম্প বহুবার সংবিধান নির্ধারিত দুই মেয়াদের বেশি সময় প্রেসিডেন্ট পদে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এক জনসমাবেশে তিনি এ বিষয়ে কৌতুক করে সমর্থকদের মধ্যে ‘ট্রাম্প ২০২৮’ লেখা টুপি দেখিয়েছিলেন, যা তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে কৌতূহল বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এই ধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা বরাবরই তার অনুসারীদের মধ্যে এক বিশেষ উন্মাদনা তৈরি করেছে, যা তার রাজনৈতিক ভিত্তি আরও মজবুত করার চেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হয়।
সাংবিধানিক বাধা ও সম্ভাব্য পথ
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কিছু সহযোগী এবং সমর্থক তার এসব ইঙ্গিতকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন। তারা ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আইনি বা রাজনৈতিক পথ অন্বেষণের কথা বলছেন, যা গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রাখে। তবে, মার্কিন সংবিধানের গভীরতা ও এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অবগত অধিকাংশ সংবিধান বিশেষজ্ঞ এমন সম্ভাবনাকে একবাক্যে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের মতে, সংবিধানে বর্ণিত স্পষ্ট বিধিমালা এই ধরনের যেকোনো প্রচেষ্টাকে অকার্যকর করে দেবে।
মার্কিন সংবিধানের ২২তম সংশোধনী সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করে যে, কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি সময় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে পারবেন না। এই বিধানটি দেশের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে। এই সাংবিধানিক বাধাকে এড়িয়ে যাওয়ার একটি অদ্ভুত এবং বিতর্কিত উপায় কিছু ট্রাম্প সমর্থক প্রস্তাব করেছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, ট্রাম্প যদি উপরাষ্ট্রপতি পদে লড়েন এবং অন্য কোনো প্রার্থী প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হন, তাহলে সেই প্রেসিডেন্ট পরবর্তীতে পদত্যাগ করতে পারেন, যার ফলস্বরূপ ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট পদে বসতে পারবেন। এটি ছিল এক জটিল এবং নজিরবিহীন সাংবিধানিক কৌশল, যা নিয়ে আইনি ও নৈতিক বিতর্ক দেখা দেয়।
উপরাষ্ট্রপতি পদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
কিন্তু এই জল্পনা এবং প্রস্তাবিত কৌশলকে উড়িয়ে দিয়েছেন স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার মালয়েশিয়া থেকে টোকিও যাওয়ার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী আমার সেটা করার সুযোগ থাকবে।’ তবে, তিনি দ্রুতই যোগ করেন, ‘আমি এটা করব না। আমি মনে করি এটা “খুব বেশি চালাকি”। হ্যাঁ, আমি এটাকে বাতিল করব। কারণ, এটা খুব বেশি চালাকি। আমার মনে হয় মানুষ এটা পছন্দ করবে না। এটা খুব চালাকি। এটা ঠিক হবে না।’ ট্রাম্পের এই মন্তব্য উপরাষ্ট্রপতি পদের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের বিতর্কিত উপায়টিকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে, যা তার সমর্থকদের একটি অংশের মধ্যে কিছুটা হতাশা তৈরি করতে পারে।
তবে, ট্রাম্পের উপরাষ্ট্রপতি পদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা সত্ত্বেও, তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়ে তার অস্পষ্টতা মার্কিন রাজনৈতিক মহলে জল্পনা জিইয়ে রেখেছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এই বিষয়ে অনড় যে, ২২তম সংশোধনীকে পাশ কাটিয়ে ট্রাম্পের পক্ষে তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়া প্রায় অসম্ভব। তাদের মতে, দেশের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি এবং সাংবিধানিক কাঠামো এমন কোনো অস্পষ্টতাকে সমর্থন করে না। তাই, ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পদক্ষেপ এবং তার সমর্থকদের আকাঙ্ক্ষা সংবিধানের কঠোর বাস্তবতার মুখে কীভাবে দাঁড়ায়, তা সময়ই বলে দেবে।
