More

    অবৈধ ভারতীয় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার কানাডার

    কানাডার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে ভারতীয় নাগরিকদের লক্ষ্য করে, এই বছর এক নজিরবিহীন এবং ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এটি দেশটির অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে অন্যতম সুদূরপ্রসারী ও কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অবৈধভাবে বসবাসকারী বা ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও কর্মসংস্থানে নিযুক্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে এই অভিযান এখন তুঙ্গে।

    কঠোর অভিযান: প্রেক্ষাপট ও লক্ষ্য

    কানাডার অভিবাসন বিভাগ ও সীমান্ত পরিষেবা সংস্থা (CBSA) জানিয়েছে যে, দেশের অভিবাসন আইনের অখণ্ডতা বজায় রাখতে এবং অবৈধ শ্রমবাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে এই অভিযান জোরদার করা হয়েছে। কানাডার ক্যালগারি শহরের নির্মাণাধীন প্রকল্প থেকে শুরু করে টরোন্টো ও ভ্যাঙ্কুভারের আশপাশের রেস্তোরাঁ এবং কৃষিখামারগুলোতে এসব অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। মূলত সেসব সাবেক শিক্ষার্থী বা অস্থায়ী কর্মীরা এর লক্ষ্য, যাদের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে কিন্তু তাঁরা এখনো কানাডায় অবস্থান করে অবৈধভাবে কাজ করছেন। গত আগস্ট মাস থেকেই এই ধরনের কর্মীদের আটক করা হচ্ছে অথবা তাঁদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

    সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য ঘটনা

    ক্যালগারিতে নির্মাণাধীন প্রকল্পে ধরপাকড়

    গত ১৫ অক্টোবর ক্যালগারির একটি বৃহৎ নির্মাণাধীন স্থাপনায় আকস্মিক অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে চারজন অবৈধ শ্রমিককে আটক করা হয়, যাঁদের মধ্যে তিনজনই ছিলেন ভারতীয় নাগরিক। আটককৃত এই শ্রমিকদের বর্তমানে তাঁদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এই ঘটনাটি কানাডার অভ্যন্তরে অবৈধ অভিবাসী শনাক্তকরণ ও তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের দৃঢ় সংকল্পের একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।

    টরোন্টোর পিল অঞ্চলে ব্যাপক অভিযান

    এর আগে সেপ্টেম্বরে টরোন্টোর পিল অঞ্চলে পরিচালিত এক অভিযানে ৫০ জনেরও বেশি ভারতীয় শ্রমিককে শনাক্ত করা হয়। এঁদের অনেকেই ভারতের পাঞ্জাব রাজ্য থেকে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে কানাডায় এসেছিলেন। তবে তাঁদের ছাত্র ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও তাঁরা অবৈধভাবে কর্মসংস্থানে নিযুক্ত ছিলেন। এই ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কানাডার কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অবৈধ শ্রমিক নিয়োগের দায়ে তাঁদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইন লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার কানাডীয় ডলার জরিমানা ধার্য করা হয়েছে, যা নিয়োগকর্তাদের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা।

    সিবিএসএ-এর কৌশল ও প্রযুক্তিগত প্রয়োগ

    কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (সিবিএসএ) এই ধরপাকড়গুলোকে ‘দেশের অভ্যন্তরে আইন প্রয়োগ অভিযানের’ বৃহত্তর কর্মসূচির অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো অবৈধ কর্মসংস্থান এবং মানবপাচার ও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন নেটওয়ার্ককে চিহ্নিত করে ধ্বংস করা। সিবিএসএ সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, তারা তাদের অভিযানগুলোতে অতিরিক্ত এক হাজার কর্মকর্তাকে যুক্ত করেছে। এর ফলে মাঠপর্যায়ের নজরদারি ও আইন প্রয়োগের ক্ষমতা অনেক বেড়েছে।

    এছাড়াও, এই সংস্থা উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনাগুলো শনাক্ত করতে এবং অবৈধ অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন সরঞ্জাম (AI-powered tools) ব্যবহার করছে। এই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত শনাক্ত করা, তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং মানবপাচার নেটওয়ার্কগুলো ভেঙে দেওয়ায় সিবিএসএ আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হচ্ছে। এই পদক্ষেপগুলো কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি সুসংহত প্রচেষ্টার অংশ।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here