More

    প্রথম কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়াশিংটন সফর করবেন শারা

    বহু দশকের কূটনৈতিক অচলাবস্থা ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি-তে সিরিয়ার কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম ঐতিহাসিক সফর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার এই আসন্ন সফর বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং সিরিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এই সফরের মূল লক্ষ্য এবং এর কূটনৈতিক প্রভাব নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।

    গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট

    গত শনিবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে নিযুক্ত বিশেষ মার্কিন দূত টম ব্যারাক এই ঐতিহাসিক সফরের ঘোষণা দেন। তার এই ঘোষণা সিরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সূত্র অনুযায়ী, এই গুরুত্বপূর্ণ সফর আগামী ১০ নভেম্বরের দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, সিরীয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট শারা সম্ভবত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারেন। এই দুই তথ্যের মধ্যে সামান্য সময়ের ব্যবধান থাকলেও, সফরের মূল বার্তা এবং এর গুরুত্ব অপরিবর্তিত থাকছে।

    বাহরাইনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতিবিষয়ক ‘মানামা ডায়ালগ’ সম্মেলন চলাকালীন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে টম ব্যারাক এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নীতি-নির্ধারক, সামরিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই মর্যাদাপূর্ণ সম্মেলনের ফাঁকে ব্যারাক আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, প্রেসিডেন্ট শারার এই সফর সিরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত ইসলামিক স্টেট (IS) বিরোধী জোটে যোগদানে উৎসাহিত করবে। ব্যারাকের এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার মধ্যে নতুন করে নিরাপত্তা সহযোগিতা গড়ে তোলার ইঙ্গিত দেয়, যা ২০১৪ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের চলমান লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনতে পারে।

    ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও সিরিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন

    যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে সংরক্ষিত বিদেশি নেতাদের ওয়াশিংটন সফরের ঐতিহাসিক তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন রাজধানী সফর করেননি। এটিই হবে প্রথমবার যখন সিরিয়ার কোনো রাষ্ট্রপ্রধান ওয়াশিংটনের মাটিতে পা রাখবেন, যা নিঃসন্দেহে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট শারা নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছিলেন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সিরিয়ার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির একটি ইঙ্গিত ছিল।

    গত বছরের ডিসেম্বরে স্বৈরাচারী বাশার আল-আসাদের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নিরন্তর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আসাদ আমলে বিশ্বশক্তিগুলোর সঙ্গে সিরিয়ার সম্পর্ক একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। সেই বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সিরিয়ার মেলবন্ধন ঘটানোই শারার সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনে অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যরা ইতোমধ্যেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর করেছেন, যার ধারাবাহিকতায় ওয়াশিংটন সফরকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই সফর কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here