রাজধানীর ব্যস্ততম চকবাজার এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এক খেটে খাওয়া ঠেলাগাড়ি শ্রমিক। রবিবার দুপুরে দ্রুতগতিতে আসা একটি প্রিজন ট্রাকের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই গুরুতর আহত হয়ে পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সোহাগ হাওলাদার (৩০) নামের এই শ্রমিক। এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি পুরো এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে এবং জনমনে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
দুর্ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
রবিবার বেলা সোয়া একটার দিকে চকবাজারের নাজিমুদ্দিন রোডে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ থেকে কারা সদর দপ্তরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলো ঘাতক প্রিজন ট্রাকটি। ট্রাকটির চালকের আসনে ছিলেন মনসুর নামের এক ব্যক্তি। সহকারী প্রধান কারারক্ষী সাইফুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ট্রাকটি নাজিমুদ্দিন রোডে পৌঁছানোর পরপরই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহত সোহাগ হাওলাদারের সহকর্মীরা জানান, দুর্ঘটনার সময় তাঁরা চারজন মিলে আগামাছি লেন থেকে ঠেলাগাড়িতে করে ইট বহন করে নাজিমুদ্দিন রোড ধরে যাচ্ছিলেন। দুপুর তখন প্রায় একটার মতো। অকস্মাৎ, নাজিমুদ্দিন রোডের বড় মসজিদের সামনে পৌঁছামাত্রই পিছন দিক থেকে দ্রুতগতিতে ছুটে আসা একটি প্রিজন ট্রাক সজোরে তাঁদের ঠেলাগাড়িকে ধাক্কা মারে। এই ভয়াবহ ধাক্কায় সোহাগ মুহূর্তেই ছিটকে রাস্তায় পড়েন এবং মারাত্মকভাবে আহত হন। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলেও, কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ
সোহাগের আরেক সহকর্মী আশরাফুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার আকস্মিকতা ও ভয়াবহতা দেখে স্থানীয় এলাকাবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা দ্রুত ঘাতক ট্রাকটিকে থামিয়ে চালক মনসুরকে আটক করেন এবং পুলিশে খবর দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ, পরিদর্শক মো. ফারুক এই মর্মান্তিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান যে, সোহাগ হাওলাদারের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকেও অবগত করা হয়েছে এবং পরবর্তী আইনানুগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
নিহতের পারিবারিক পরিচয়
নিহত সোহাগ হাওলাদারের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলায়। তাঁর বাবার নাম দুলাল হাওলাদার। জীবিকার টানে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তাঁর অকালমৃত্যু পুরো পরিবারে এক অপূরণীয় শূন্যতা ও চরম অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এই দুর্ঘটনায় শুধু একটি জীবন নয়, একটি পরিবারের স্বপ্নও ধূলিসাৎ হয়ে গেল।
