More

    দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জামায়াতের

    দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যখন এক ধরনের অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, ঠিক তখনই স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং ভবিষ্যৎ পথরেখা নির্ধারণের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির, সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি খোলামেলা আলোচনার জন্য প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

    রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারে অবস্থিত আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তাৎপর্যপূর্ণ আহ্বান জানান। চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং জনমনে সৃষ্ট উদ্বেগ নিরসনের একটি উপায় হিসেবে তিনি এই আলোচনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

    বিরোধ ভুলে আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান

    সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের স্পষ্টভাষায় বলেন, “বিএনপির পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের উসকানি এলেও, জামায়াত কোনো প্রকার বিরোধে জড়াতে আগ্রহী নয়।” তিনি জনগণের মধ্যে বিরাজমান গভীর আতঙ্ক এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার কথা উল্লেখ করেন। এই ভীতি দূর করা এবং দেশের আগামী দিনের কর্মপন্থা স্পষ্ট করা রাজনৈতিক দলগুলোর মৌলিক দায়িত্ব বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। এ পরিস্থিতিতে, অতীতের সকল বিভেদ ও মতপার্থক্য ভুলে একটি উন্মুক্ত আলোচনার টেবিলে বসার জন্য তিনি জোরালো আহ্বান জানান।

    তিনি বিশেষ করে সুষ্ঠু নির্বাচন, জুলাই সনদ এবং গণভোটকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জাতীয় উত্তেজনা প্রশমিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তাহের বলেন, এই সকল স্পর্শকাতর বিষয়ে খোলামেলা ও গঠনমূলক আলোচনা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাতে এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ দেখাতে অত্যন্ত জরুরি।

    ‘রাজনীতির খেলায় অংশ নিতে চায় না জামায়াত’

    জামায়াতের নায়েবে আমির দৃঢ়ভাবে বলেন, “রাজনীতিতে বহু প্রকার কৌশল ও খেলার প্রচলন থাকলেও, জামায়াত এসব খেলায় অংশ নিতে চায় না।” বরং, তাদের মূল লক্ষ্য হলো একটি সত্যিকারের স্বাধীন, সার্বভৌম এবং স্থিতিশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণ। তিনি সকল রাজনৈতিক পক্ষকে এই মহান জাতীয় উদ্দেশ্য সাধনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

    গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রাথমিক আমন্ত্রণ

    বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের জানান যে, বর্তমানে এই আহ্বানটি গণমাধ্যমের মাধ্যমেই দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে তারা বিএনপির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে চান। এই আহ্বানের প্রতি বিএনপির মনোভাব দেখার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

    তিনি আরও অবহিত করেন যে, আগামী সোমবার জামায়াতের দলীয় কার্যনির্বাহী কমিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে তাদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং একটি বৃহৎ সমাবেশ আয়োজনের সম্ভাবনা সহ বিভিন্ন কৌশলগত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

    নোট অব ডিসেন্ট এবং ঐকমত্যের গুরুত্ব

    গণভোটের ক্ষেত্রে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (ভিন্নমত) সহ কোনো নজির বিশ্বের কোথাও নেই উল্লেখ করে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি আলোকপাত করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দ্বিমত প্রকাশের অধিকার সবারই আছে এবং এটি গণতন্ত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো যা সম্মিলিত বা সংখ্যাগরিষ্ঠ দল মিলে গ্রহণ করে। সে জন্য, বিএনপি যখন নোট অব ডিসেন্ট পেশ করেছিল, তখন জামায়াত তাতে কোনো আপত্তি জানায়নি। এটি ঐকমত্যের প্রতি জামায়াতের সম্মানবোধেরই পরিচায়ক। তবে, তিনি এও স্পষ্ট করেন যে, ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে রাজনৈতিক দল বা দলের নেতার নোট অব ডিসেন্টের আইনি বা কার্যকর ভূমিকা ভিন্ন হয়, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তই সাধারণত প্রাধান্য পায়।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here