দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন বাঁক নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের সকল কমিটির ওপর থেকে আরোপিত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে, যার মাধ্যমে সারা দেশে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পুনরায় পূর্ণোদ্যমে সচল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রবিবার আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত দেয় যে, জুলাই মাসের ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল আকাঙ্ক্ষাগুলো বাস্তবায়নে ছাত্র সমাজ তাদের সংগ্রামকে আরও সুসংগঠিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
উদ্দেশ্য পূরণে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনকারীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে উল্লেখ করেছেন যে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে যে বিশাল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান একটি সুনির্দিষ্ট আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দেশ্য নিয়ে সংঘটিত হয়েছিল, তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এখনও অধরাই রয়ে গেছে। তারা বলছেন, সেই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দৃশ্যত ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষত, জুলাই মাসের শহীদ পরিবার এবং আহতদের প্রতি সরকারের দায়িত্বহীনতা আন্দোলনকারীদের হতাশ করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে:
- জুলাইয়ের শহীদ পরিবার এবং আহতদের জন্য যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি।
- তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে, যা এক গভীর উদ্বেগের কারণ।
- ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের ওপর হামলার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও ঘটেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
বিচারিক প্রক্রিয়ার অস্বচ্ছতা ও সরকারের অযোগ্যতা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই মাসের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়েও তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ এখন পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। এটি হাজারো শহীদ ও আহতদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা অন্তর্বর্তী সরকারের চরম অযোগ্যতা ও ব্যর্থতারই প্রমাণ। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি ছাত্র সমাজকে আরও শঙ্কিত করে তুলেছে এবং তাদের ন্যায়বিচারের দাবিকে আরও জোরালো করেছে।
কমিটি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও কার্যক্রম পুনরায় চালু
এই পরিস্থিতিতে, জুলাই অভ্যুত্থানের বৈপ্লবিক রূপান্তর নিশ্চিত করতে এবং ঐতিহাসিক ‘এক দফা’ দাবি—অর্থাৎ ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিলোপ ও একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণের নিমিত্তে—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশব্যাপী সকল ইউনিট কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে।
এই ঘোষণার মাধ্যমে:
- দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের ইউনিট কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হলো।
- সংশ্লিষ্ট সকল ইউনিটকে অবিলম্বে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পুনরায় সচল করার কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- সারা দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর ও জেলা ইউনিটকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের কমিটি পুনর্গঠন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনের এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত করে যে, তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনে কোনো ধরনের আপস করতে প্রস্তুত নয় এবং সংগঠিত শক্তির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর।
