লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-এর মহাসচিব এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদোয়ান আহমেদ সম্প্রতি দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক শক্তি, আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, উভয়কেই মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে মন্তব্য করেছেন যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই দুটি দলই বিভিন্ন সময়ে মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত ছিল।
গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিকালে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি কলেজ মাঠে আয়োজিত উপজেলা গণতান্ত্রিক স্বেচ্ছাসেবক দলের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. রেদোয়ান আহমেদ এসব কথা বলেন। তার তেজস্বী বক্তৃতায় তিনি উভয় দলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন এবং এর নেপথ্যে ঐতিহাসিক ও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেন।
জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ
ড. রেদোয়ান আহমেদ তার বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর ১৯৭১ সালের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে এই দলটি বাংলার মুক্তিকামী নিরীহ জনতা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। তারা সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠনে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, তাদের বিচার প্রক্রিয়া আজও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে এবং ন্যায়বিচারের দাবি এখনও প্রবল।
সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান কর্তৃক ‘ভুল’ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিরও তিনি কঠোর সমালোচনা করেন। ড. রেদোয়ান আহমেদ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, ‘ভুল’ আর ‘অপরাধ’ এক কথা নয়। জামায়াতকে তাদের প্রতিটি সুনির্দিষ্ট অপরাধের কথা প্রকাশ্যে উল্লেখ করে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বাংলার আপামর জনগণ যদি তাদের ক্ষমা করে, তবেই তারা ক্ষমা পাবে। অন্যথায়, বাংলার পবিত্র মাটিতে তাদের সংঘটিত প্রতিটি অপরাধের জন্য বিচার অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমেদ আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী নিজেদেরকে ‘ইসলাম’ হিসেবে দাবি করে এবং তাদের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লায়’ ভোট দিলে নাকি বেহেস্ত নিশ্চিত হবে বলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে। তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর বিখ্যাত উক্তি অনুসারে বলেন, “নীল নদের পানি যেমন নীল না, তেমনি জামায়াতে ইসলামীও ‘ইসলাম’ না।” তিনি ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আবেগের সাথে ছিনিমিনি খেলার তীব্র নিন্দা জানান।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ
অপরদিকে, ড. রেদোয়ান আহমেদ আওয়ামী লীগকে ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে থাকার হীন উদ্দেশ্যে ‘স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ’ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় নিরীহ ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে। তিনি ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা’র নির্দেশে তার বাহিনীর গুলি বর্ষণের ফলে শত শত মায়ের কোল খালি হওয়ার ঘটনাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, এই পাশবিক আক্রমণের ফলে অগণিত পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং বহু প্রাণের বিনিময়ে এই আন্দোলনকে দমন করা হয়েছে। ড. রেদোয়ান আহমেদ কঠোর ভাষায় ঘোষণা দেন যে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আনীত এই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলার মাটিতে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। তিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
