More

    রাজনীতি এখন ডাস্টবিনের মতো হয়ে গেছে: রুমিন ফারহানা

    দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রায়শই বিভিন্ন মহলে এর গুণগত মান ও ভবিষ্যতের গতিপথ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, রুমিন ফারহানা, দেশের রাজনীতিকে ‘ডাস্টবিনের’ সঙ্গে তুলনা করে এক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর এই কঠোর মন্তব্য জাতীয় রাজনীতিতে বিদ্যমান সংকট ও অবক্ষয়কে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছে।

    রাজনৈতিক অঙ্গনের অবক্ষয় ও ডিজিটাল মাধ্যমের প্রভাব

    রুমিন ফারহানা তাঁর বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, দেশের রাজনীতি বর্তমানে এমন এক নিকৃষ্টতর অবস্থায় উপনীত হয়েছে, যেখানে একজন শিক্ষিত, সম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য নারীর পক্ষে স্বাচ্ছন্দ্যে অংশগ্রহণ করা অত্যন্ত কঠিন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “একজন শিক্ষিত নারী, যার একটি সম্মানজনক পেশা আছে এবং যিনি একটি ভালো পরিবারের সদস্য, তিনি এই হীনমন্যতা ও কাদা ছোড়াছুড়ির মধ্যে নামবেন কেন?” তাঁর মতে, রাজনীতি এখন আর সেবার ব্রত বা আদর্শের চর্চার ক্ষেত্র নয়, বরং এক ধরনের ‘ডাস্টবিনে’ পরিণত হয়েছে।

    এই অবক্ষয়ের পেছনে আধুনিক প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাবকেও তিনি দায়ী করেছেন। বিশেষ করে, সবার হাতে মোবাইল ফোন থাকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অবাধ ব্যবহার এবং ‘বট আইডি’ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এর অপব্যবহারের ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। গুজব, বিদ্বেষমূলক প্রচার এবং ব্যক্তিগত আক্রমণের মতো অনৈতিক চর্চা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক প্রসার লাভ করায়, রাজনৈতিক বিতর্কের সুস্থ পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে, যা সম্মানজনক ব্যক্তিদের রাজনীতি বিমুখ করছে।

    নারী নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দলের ভূমিকা

    নারী নেতৃত্ব প্রসঙ্গে রুমিন ফারহানা আরও বলেন যে, রাজনীতিতে প্রবেশ করলেও অনেক সময় দলগুলো যোগ্য নারী নেতৃত্বের ওপর পূর্ণ আস্থা স্থাপন করতে দ্বিধা করে। তিনি সাম্প্রতিক এক উদাহরণ টেনে জানান, বিএনপি এবার যে ২৩৭ জন প্রার্থীকে আসন্ন নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে, তাদের মধ্যে মাত্র ১০ জন নারী। এই পরিসংখ্যান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নারী নেতৃত্বের প্রতি বিদ্যমান অনীহা বা সীমাবদ্ধতাকেই স্পষ্ট করে তোলে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সামগ্রিকভাবে দেশের রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে এবং অনেক বড় রাজনৈতিক দলও তাদের সংবিধানে নির্ধারিত ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, যা নারী ক্ষমতায়নের পথে এক বড় বাধা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

    তবে, দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোতে যোগ্য নারী নেতৃত্বের অভাব রয়েছে—এমন ধারণার সঙ্গে রুমিন ফারহানা একমত নন। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “পুরুষদের তুলনায় হয়তো যোগ্য নারীর সংখ্যা কিছুটা কম, কিন্তু এতটাই কম নয় যে তারা মাত্র ৩ বা ৪ শতাংশ মনোনয়ন পাবেন।” তিনি এই হারকে “অত্যন্ত অপ্রতুল” হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং মনে করেন যে, যোগ্যতার মাপকাঠিতে আরও অনেক বেশি নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা উচিত ও তাঁদের উপযুক্ত মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

    জোট রাজনীতি, আরপিও এবং দলীয় স্বকীয়তা

    জোটের রাজনীতি এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রসঙ্গে রুমিন ফারহানা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন। ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-এর মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী মন্তব্য করেছিলেন যে, বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষুদ্রতর দলগুলোকে একীভূত করে এক প্রকার ‘রাজতন্ত্র’ কায়েম করতে সচেষ্ট এবং এই উদ্দেশ্যেই জোটের বিরোধিতা ও আরপিও সংশোধনের বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে।

    এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রুমিন ফারহানা বলেন যে, এবারের নির্বাচনে যারা জোটের প্রার্থী হবেন, যদি তাদের নিজস্ব দলের নিবন্ধন থাকে, তবে তাদেরকে নিজের দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে। তিনি মনে করেন, এই নীতিগত সিদ্ধান্তের পক্ষে ও বিপক্ষে উভয় দিক থেকেই শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপিত হয়েছে। একদিকে যেমন এটি ছোট দলগুলোর স্বকীয়তা ও দলীয় পরিচিতি বজায় রাখতে সহায়ক, অন্যদিকে জোটের সামগ্রিক কৌশল এবং নির্বাচনী সমীকরণে এর প্রভাব নিয়েও আলোচনা রয়েছে। এই বিষয়টি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বকীয়তা এবং জোট রাজনীতির জটিলতাকে এক নতুন মাত্রায় তুলে ধরে, যেখানে দলীয় প্রতীক ও জোটের ঐক্যমত্যের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যের প্রয়োজন হয়।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here