দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আসন্ন অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টের জন্য নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। এই ১৫ সদস্যের দলে একটি বড়সড় চমক দেখা গেছে, যা ক্রিকেট মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, এক অপ্রত্যাশিত মুখের অন্তর্ভুক্তি সবাইকে অবাক করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ স্কোয়াডে অপ্রত্যাশিত চমক
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ স্কোয়াডে সবচেয়ে বড় বিস্ময় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন অনভিষিক্ত ৩১ বছর বয়সী ওপেনার জেক ওয়েদারেল্ড। সাধারণত তরুণ প্রতিভাদের প্রাধান্য দেওয়া হলেও, এই অভিজ্ঞ ও অনভিষিক্ত ক্রিকেটারের অন্তর্ভুক্তি নির্বাচকদের ভিন্ন চিন্তাভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি জেক ওয়েদারেল্ডের প্রতি তার গভীর আস্থার কথা জানিয়েছেন। তার মতে, নতুন এই ওপেনারের মধ্যে একজন সফল ব্যাটারের জন্য প্রয়োজনীয় ‘সব ধরনের গুণ’ বিদ্যমান রয়েছে, যা তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফল হতে সাহায্য করবে। বেইলির এই মন্তব্য ওয়েদারেল্ডকে ঘিরে প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
স্কোয়াডে পরিবর্তন ও নেতৃত্ব
এদিকে, দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ব্যাটার মার্নাস লাবুশেনকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যা দলের মিডল অর্ডারে আরও দৃঢ়তা যোগাবে। তবে, তরুণ ওপেনার স্যাম কনস্টাসকে ১৫ সদস্যের স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি কঠিন সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পাশাপাশি, নিয়মিত অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের চোটের কারণে প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞ স্টিভ স্মিথ। তার নেতৃত্ব দলের জন্য একটি স্থিতিশীলতা নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডেভিড ওয়ার্নারের উত্তরসূরি খোঁজা: ওয়েদারেল্ডের সম্ভাব্য ভূমিকা
যদি ৩১ বছর বয়সী ওয়েদারেল্ড ইংল্যান্ডের বেন স্টোকসের দলের বিপক্ষে পার্থে মাঠে নামেন, তবে ডেভিড ওয়ার্নারের অবসরের পর থেকে উসমান খাজার সঙ্গে এটি হবে অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ ওপেনিং জুটি। ওয়ার্নারের অবসরের পর থেকে একটি স্থিতিশীল ওপেনিং পার্টনার খুঁজে পেতে অস্ট্রেলিয়া হিমশিম খাচ্ছে। এর আগে স্টিভ স্মিথ, নাথান ম্যাকসুইনি, ট্র্যাভিস হেড, লাবুশেন এবং কনস্টাস উসমান খাজার সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিলেন—কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তাদের কারও সঙ্গেই দীর্ঘমেয়াদী সফলতা আসেনি। ওয়েদারেল্ডের অন্তর্ভুক্তি এই দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের একটি নতুন প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে, ওয়েদারেল্ডের অভিষেক এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক বেইলি। তিনি বলেন, “না, এখনো একাদশে নিশ্চিত হননি। আমাদের ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জনই শেফিল্ড শিল্ডের চতুর্থ রাউন্ডে খেলছে। সেখান থেকে আরও তথ্য পাওয়া যাবে, যা চূড়ান্ত একাদশ গঠনে সহায়তা করবে।” এর অর্থ, ওয়েদারেল্ডকে তার স্থান নিশ্চিত করতে ঘরোয়া পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করতে হবে।
ক্যামেরন গ্রিনের প্রত্যাবর্তন ও ব্যাটিং অর্ডারের কৌশল
অস্ট্রেলিয়ান দলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিনের দীর্ঘ সময় পর বোলিংয়ে ফেরা। পিঠের অস্ত্রোপচারের পর তিনি এতদিন কেবল ব্যাটিং করছিলেন। গ্রিনের বোলিং ফিটনেস দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দলের ভারসাম্য রক্ষায় বড় ভূমিকা পালন করে।
যদি ক্যামেরন গ্রিন যথেষ্ট বোলিং ফিটনেস দেখাতে পারেন, তবে তিনি ছয় নম্বরে খেলবেন এবং ওয়েদারেল্ড ওপেনিংয়ে নামবেন। এই পরিস্থিতিতে, মার্নাস লাবুশেন তার প্রিয় তিন নম্বর পজিশনে ফিরবেন। লাবুশেন এই মৌসুমে আট ইনিংসে পাঁচটি সেঞ্চুরি করে নিজের অসাধারণ ফর্মের প্রমাণ দিয়েছেন, যা তার প্রিয় পজিশনে তাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করবে। তবে, যদি গ্রিন পুরোপুরি বোলিং করতে না পারেন, তাহলে লাবুশেনকে ওপেনিংয়ে নামতে হতে পারে এবং গ্রিন তিন নম্বরে ব্যাট করবেন। এই কৌশলগত পরিবর্তনগুলি দলের পারফরম্যান্সে বড় প্রভাব ফেলবে।
জেক ওয়েদারেল্ড: ঘরোয়া ক্রিকেটের ধারাবাহিক পারফর্মার
ডানহাতি ব্যাটার জেক ওয়েদারেল্ড ঘরোয়া ক্রিকেটে গত কয়েক বছর ধরে একজন ধারাবাহিক পারফর্মার হিসেবে পরিচিত। তার অভিজ্ঞতা এবং স্থিতিশীল ব্যাটিং ক্ষমতা তাকে এই অপ্রত্যাশিত সুযোগ এনে দিয়েছে। তিনি শেফিল্ড শিল্ড এবং অন্যান্য ঘরোয়া টুর্নামেন্টে নিয়মিত রান করে এসেছেন, যা নির্বাচকদের নজর কেড়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার এই ফর্ম ধরে রাখতে পারা অস্ট্রেলিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
