উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের উত্তেজনাপূর্ণ এক রাতে নিজেদের ঘরের মাঠ সান সিরোতে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিল গত মৌসুমের ফাইনালিস্ট ইন্টার মিলান। আলমাটির বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানের এই জয় ইতালিয়ান জায়ান্টদের জন্য ছিল ঘাম ঝরানো। এই বিজয়ের মাধ্যমে তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেদের অপরাজিত ধারা অক্ষুণ্ন রাখলেও, চলতি মৌসুমে এই প্রথম প্রতিপক্ষের জালে বল জড়াতে দেখল নিজেদের গোলরক্ষককে – যা ম্যাচটির তীব্রতাকেই তুলে ধরে।
চার রাউন্ড শেষে গ্রুপ টেবিলে ইন্টার মিলানের সংগ্রহ এখন ১২ অমূল্য পয়েন্ট। একই সংখ্যক পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে শীর্ষে অবস্থান করছে জার্মান পরাশক্তি বায়ার্ন মিউনিখ এবং ইংলিশ জায়ান্ট আর্সেনাল, যা গ্রুপ সেরা হওয়ার লড়াইকে আরও জমিয়ে তুলেছে। অন্যদিকে, কাজাখস্তানের ক্লাব কাইরাত আলমাটি চার ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতেই রয়ে গেছে। তবে তাদের এই লড়াইয়ের মানসিকতা প্রমাণ করে যে ফুটবল মাঠে পরিসংখ্যান সব সময় শেষ কথা বলে না।
কিন্তু পরিসংখ্যানের এই ব্যবধান মাঠে মোটেও প্রতিফলিত হয়নি। সান সিরোর নিজেদের দুর্গে কাইরাত আলমাটি যেন এক ভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয়েছিল। তারা ম্যাচের শুরু থেকেই ইন্টারের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। প্রথমার্ধে ইতালিয়ান জায়ান্টরা তাদের স্বাভাবিক ছন্দে খেলতেই পারছিল না। আলমাটির সুসংগঠিত রক্ষণভাগ এবং মাঝমাঠের শক্তিশালী উপস্থিতি ইন্টারের আক্রমণভাগকে বারংবার নিষ্ক্রিয় করে রাখে। একের পর এক সুযোগ তৈরি করেও সেগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় স্বাগতিকরা। সমর্থকরা যখন কিছুটা হতাশ হতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। প্রথমার্ধের বাঁশি বাজার মিনিটখানেক আগে, ইন্টারের প্রাণভোমরা লাউতারো মার্টিনেজ তার চেনা গোল করার ভঙ্গিতে বল জালে জড়িয়ে দলকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নিয়ে যান। এই গোলটি বিরতিতে যাওয়ার আগে ইন্টারকে দারুণ স্বস্তি দেয় এবং দ্বিতীয়ার্ধের জন্য আত্মবিশ্বাস যোগায়।
দ্বিতীয়ার্ধের নাটকীয়তা এবং ইন্টারের জয়
বিরতি থেকে ফেরার মাত্র দশ মিনিটের মাথায় সান সিরোর গ্যালারি যেন পিনপতন নীরবতায় ডুবে যায়। এক কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে দুর্দান্ত এক হেডে গোল করে কাইরাতের অফরি আরাদ ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনেন। এই অপ্রত্যাশিত গোলটি ইন্টারের খেলোয়াড় এবং সমর্থকদের মধ্যে একরাশ উদ্বেগ সৃষ্টি করে। কিন্তু নিজেদের মাঠে হার মানতে নারাজ ইন্টার খুব দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ম্যাচের গতি আবারও ইন্টারের নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে এবং তারা গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। অবশেষে, ৬৭তম মিনিটে দলের জন্য কাঙ্ক্ষিত গোলটি আসে। এবার ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন কার্লোস অগুস্তো। তার নিখুঁত ফিনিশিংয়ে ইন্টার ২-১ ব্যবধানে আবারও এগিয়ে যায়। এই গোলটি ম্যাচের বাকি সময় ধরে রাখতে সক্ষম হয় ইন্টার, যা তাদের জন্য মূল্যবান তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করে দেয়।
দিনশেষে ইন্টার মিলান জয়ী হলেও, ম্যাচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাদের যাত্রাপথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়ে গেল। কোনো প্রতিপক্ষকেই হালকাভাবে নেওয়া যায় না, এমনকি পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকা দলও বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারে। সান সিরোর এই কঠিন জয় প্রমাণ করে ইন্টারের দৃঢ়তা এবং প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা। এই ফলাফলের পর তাদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পরের ধাপের দিকে এগিয়ে যাওয়া আরও এক ধাপ নিশ্চিত হলো, যদিও গ্রুপসেরা হওয়ার লড়াই এখনও বাকি। কাইরাত আলমাটি তাদের লড়াকু মানসিকতার জন্য প্রশংসার দাবিদার, যা ম্যাচের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
