More

    বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু ৭ নভেম্বরের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে

    এবারের ৭ নভেম্বর বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এবারও দিনটিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করা হলেও, দলটির সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, এবারের আয়োজন হবে পূর্বের সকল আয়োজনের চেয়ে ভিন্ন মেজাজে ও সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে। এই দিনটির মাধ্যমেই কার্যত আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের নির্বাচনী যাত্রার আনুষ্ঠানিক শুভারম্ভ করতে যাচ্ছে, যেখানে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন। এই কৌশলগত পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বিএনপি শুধু দিবসটি পালন করবে না, বরং তাদের রাজনৈতিক বার্তা এবং নির্বাচনী ইশতেহারকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করবে।

    নির্বাচনী রণকৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে ৭ নভেম্বর

    বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবারের ৭ নভেম্বরের দলীয় কর্মসূচির মূল লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এই বিশেষ দিনটিতে শুধু আলোচনা অনুষ্ঠান বা শোভাযাত্রার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না কার্যক্রম। বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়সহ সারাদেশে ব্যাপক জনসভার আয়োজন করা হয়েছে, যা সম্ভাব্য প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনী প্রচারণার এক বিশাল মঞ্চ তৈরি করবে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং জনগণের মাঝে দলের অবস্থান সুদৃঢ় করার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। এটি কেবল একটি দিবস উদযাপন নয়, বরং তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত একটি সংগঠিত নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

    ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রচার ও প্রার্থী নির্দেশনা

    আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গত সোমবার বিএনপি ২৩৭ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণা করেছে। এই মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই ৭ নভেম্বরের ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারকে একীভূত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের দলীয় নির্বাচনী প্রতীক ‘ধানের শীষ’-এর পক্ষে দেশব্যাপী প্রচার জোরদার করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে রাজধানীতে আজ বেলা তিনটায় বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এক বিশাল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও, ঢাকার বিভিন্ন আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সমাবেশসহ ব্যাপক জনসংযোগ কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন, যা রাজধানীতে দলের শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে জনসমর্থন আদায়ের একটি কার্যকর প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করবে।

    গণ-অভ্যুত্থান এবং পরিবর্তিত রাজনৈতিক কৌশল

    দলীয় সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের পর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এবারের ৭ নভেম্বরকে ভিন্ন আঙ্গিকে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই গণ-অভ্যুত্থান দেশে এক নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে, যার ফলস্বরূপ বিএনপি তাদের কৌশলগত পরিকল্পনা ঢেলে সাজিয়েছে। এই পরিবর্তিত মেজাজের মূল উদ্দেশ্য হলো ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ এর কর্মসূচির মাধ্যমে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের সকল সম্ভাব্য প্রার্থীকে একযোগে মাঠে নামানো। এটি শুধু একটি প্রতীকী সমাবেশ নয়, বরং জনগণের মাঝে দলের ঐক্য, সংহতি এবং আসন্ন নির্বাচনের জন্য তাদের সামগ্রিক প্রস্তুতির একটি জোরালো প্রদর্শন। এর মাধ্যমে দলটি বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের সক্ষমতা ও জনসমর্থন জানান দিতে চাইছে।

    ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের প্রেক্ষাপট

    ১৯৭৫ সালের ঘটনাবহুল ও ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বরাবরই ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে উদ্‌যাপন করে আসছে। এই দিনটি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসার স্মারক হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষিত করেন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেন। বিএনপির কাছে এই দিনটি কেবল ক্ষমতার পালাবদল নয়, বরং দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার এক অবিস্মরণীয় বিপ্লবের প্রতীক।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here