More

    হাইজাম্পের রেকর্ড–কন্যা এখন নারী ফুটবলের কোচ

    বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক পরিচিত নাম, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অ্যাথলেট উম্মে হাফসা রুমকী। দীর্ঘ আট বছর অ্যাথলেটিক্সে সাফল্য লাভের পর তিনি আবারও ফিরে আসছেন তার প্রথম ভালোবাসার অঙ্গন ফুটবলে। এবার খেলোয়াড় হিসেবে নয়, বরং বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দলের গোলকিপার কোচ হিসেবে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছেন তিনি। তার এই প্রত্যাবর্তন দেশের নারী ফুটবলে নতুন গতি আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামীকাল থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এই গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

    ফুটবলের মাঠে প্রত্যাবর্তন ও নতুন ভূমিকা

    উম্মে হাফসা রুমকীর ক্রীড়া জীবনের যাত্রাপথ নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণাদায়ক। এক সময় দেশের ফুটবলের সবুজ গালিচায় তার পদচারণা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। ফুটবলকে পেছনে ফেলে অ্যাথলেটিক্সে মন দিলেও, খেলাটির প্রতি তার টান ছিল অটুট। সেই টানের সূত্র ধরেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) তাকে জাতীয় নারী দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনূর্ধ্ব-২০ দলের গোলকিপার কোচের দায়িত্ব অর্পণ করেছে। এই দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে তিনি তার সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তার এই প্রত্যাবর্তন শুধু তার ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের মোড় ঘোরানোই নয়, বরং দেশের নারী ফুটবলের অগ্রযাত্রায় একটি সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    খেলোয়াড়ি জীবনের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা

    ফুটবলই ছিল উম্মে হাফসার প্রথম প্রেম। অল্প বয়সেই তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দলের জার্সিতে তিনি চীন, জাপান এবং কোরিয়া সফরে প্রীতি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ঘরোয়া ফুটবলেও তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তিনি কুমিল্লা ইউনাইটেড এবং জামালপুর কাচারিপাড়ার হয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ লিগে অংশ নিয়েছেন। ফুটবলের প্রতি তার নিষ্ঠা ও প্রজ্ঞা গত বছরও দেখা গেছে, যখন তিনি জামালপুর কাচারিপাড়ার সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একজন খেলোয়াড় থেকে সহকারী কোচ এবং অতঃপর পূর্ণাঙ্গ গোলকিপার কোচের ভূমিকায় আসা তার অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

    অ্যাথলেটিক্সে উজ্জ্বল অধ্যায়

    ২০১৭ সালে উম্মে হাফসা তার ক্রীড়া জীবনের মোড় ঘুরিয়ে অ্যাথলেটিক্সে প্রবেশ করেন। এরপর দীর্ঘ আট বছর তিনি হাইজাম্প ইভেন্টে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। জাতীয় পর্যায়ে তার অর্জন ঈর্ষণীয়; হাইজাম্পে তিনি পাঁচটি স্বর্ণপদক জিতেছেন, যার মধ্যে তিনটিই ছিল জাতীয় রেকর্ড। তার ব্যক্তিগত সেরা লাফ ছিল ১.৭৪ মিটার। যদিও বর্তমানে হাইজাম্পে রেকর্ডধারী রিতু আক্তার ১.৭৬ মিটার লাফিয়ে শীর্ষে আছেন, উম্মে হাফসার অবদান আজও স্মরণীয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, কমনওয়েলথ গেমস এবং ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যা তার অ্যাথলেটিকস ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক।

    সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত ও নতুন চ্যালেঞ্জ

    ফুটবলে ফেরার সিদ্ধান্তটি উম্মে হাফসার জন্য ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ, তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে তার চুক্তিভিত্তিক চাকরি ছেড়ে এসেছেন। নৌবাহিনী থেকে কোচ হিসেবে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব থাকলেও, তিনি বেছে নিয়েছেন বাফুফের অধীনে ফুটবল কোচিংয়ের চ্যালেঞ্জিং পথ। তার ভাষ্যে, “ফুটবলে ফেরার অপেক্ষা শেষ, এখন কাজে নামার পালা। আগামীকাল শুক্রবার আমি বিমানে চট্টগ্রাম যাব মেয়েদের গোলকিপিং কোচ হিসেবে যোগ দিতে। পিটার বাটলারের নেতৃত্বে মেয়েদের ক্যাম্প চলছে এখন চট্টগ্রামে।” এই উক্তি তার দৃঢ় সংকল্প ও ফুটবলের প্রতি তার অটল ভালোবাসার পরিচায়ক।

    যোগ্যতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

    উম্মে হাফসা রুমকী শুধুমাত্র অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ই নন, তিনি একজন শিক্ষানুরাগীও বটে। তিনি বিভিন্ন কোচিং কোর্স সম্পন্ন করেছেন, যার মধ্যে গোলকিপার কোচিং কোর্স বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে তিনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞানে পড়াশোনা করছেন, যা তার কোচিং ক্যারিয়ারের ভিত্তি আরও মজবুত করবে। তার প্রত্যাশা, ফুটবলের কোচ হিসেবেও তিনি তার ক্রীড়াজীবনের মতোই সফল হবেন। তার দৃঢ় বিশ্বাস, তার অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নারী ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়ক হবে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here