দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন আগামীর নির্বাচনের উত্তাপ স্পষ্ট, ঠিক সেই মুহূর্তেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সারা দেশজুড়ে সগৌরবে পালন করেছে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’। ৭ই নভেম্বর উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই কর্মসূচিগুলো শুধু দিবসটির ঐতিহাসিক তাৎপর্যকেই স্মরণ করিয়ে দেয়নি, বরং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের এক অনানুষ্ঠানিক প্রচারণায় রূপ নেয়, যেখানে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের সামনে নিজেদের অবস্থান জানান দেন। রাজধানীর জনসভা থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সমাবেশ পর্যন্ত সর্বত্রই ছিল ভোটের আমেজ আর নির্বাচনী অঙ্গীকারের সুর।
ঢাকায় ভোটের আমেজে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদ্যাপন
রাজধানী ঢাকায় ৭ নভেম্বরের সমাবেশ ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ছিল উৎসবমুখর। দলে দলে যোগদানকারী কর্মী-সমর্থকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। এই আয়োজনে ধানের শীষের প্রতীক সম্বলিত নির্বাচনী পোস্টার, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড ছিল চোখে পড়ার মতো, যা সম্ভাব্য প্রার্থীদের উপস্থিতি ও তাদের আগাম প্রচারণা ইঙ্গিত করে। কর্মীদের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছিল নির্বাচনমুখী স্লোগান, আর মঞ্চ থেকে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বক্তব্যে প্রাধান্য পায় নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা দিক। ঢাকার এই গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, “কোনো ধরনের চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্রই আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে বানচাল করতে পারবে না।” তাঁর এই বক্তব্য দলের দৃঢ় মনোভাব ও নির্বাচনী প্রস্তুতিকেই তুলে ধরে।
দেশব্যাপী কর্মসূচিতে বিএনপির ব্যাপক উপস্থিতি
শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার সারা দেশেই বিএনপির ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, কুমিল্লা, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, বগুড়াসহ দেশের প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় ৭ নভেম্বরের কর্মসূচিগুলো পালিত হয়েছে অত্যন্ত সুসংগঠিতভাবে। প্রতিটি কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি এবং দলের প্রতি তাদের অবিচল আস্থা ও সমর্থন স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। এই কর্মসূচীগুলো কার্যকরভাবে তৃণমূল পর্যায়ে দলের সাংগঠনিক শক্তি এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিকে আরও জোরদার করেছে।
চট্টগ্রামের সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “ঐকমত্যের ভিত্তিতে গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় যে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, তার বাইরে যাওয়ার কোনো অবকাশ বা সুযোগ নেই।” তাঁর এই বক্তব্য জাতীয় রাজনীতিতে দলটির অবস্থান এবং পূর্বনির্ধারিত ঐকমত্যের প্রতি তাদের অঙ্গীকারকে পুনরায় সুদৃঢ় করে। এটি বোঝায় যে, বিএনপি একটি নির্দিষ্ট নীতিমালার ওপর অটল, যা থেকে সরে আসার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচিতে নির্বাচনী প্রচারের অনানুষ্ঠানিক সূচনা
৭ই নভেম্বরের কর্মসূচিগুলো শুধুমাত্র জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি হয়ে উঠেছিল বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণার এক অনানুষ্ঠানিক শুভ সূচনা। দেশের বিভিন্ন আসনে দলের সম্ভাব্য মনোনীত প্রার্থীদের সক্রিয় উপস্থিতি, তাদের প্রচারণামূলক কর্মতৎপরতা এবং জনসমাগমে সরাসরি অংশগ্রহণ ইঙ্গিত দেয় যে, দল ইতোমধ্যেই নির্বাচনের ময়দানে নেমে পড়েছে। এই কর্মসূচীগুলোর মধ্য দিয়ে বিএনপি শুধু তাদের রাজনৈতিক শক্তিই প্রদর্শন করেনি, বরং ভোটারদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার এক সুযোগও কাজে লাগিয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের হুঁশিয়ারি
ঢাকার সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আটটি দলের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিকে ‘নির্বাচন বানচালের একটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, নির্বাচনকে ঘিরে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হতে হবে এবং এই নির্বাচন অবশ্যই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই সম্পন্ন করতে হবে। এর অন্যথা হলে বাংলাদেশের আপামর জনগণ তা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেবে না।” তাঁর এই কঠোর হুঁশিয়ারি ইঙ্গিত দেয় যে, বিএনপি একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপে অটল এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে তীব্র প্রতিবাদের জন্য প্রস্তুত।
