ফুটবল বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসিকে ঘিরে জল্পনা যেন শেষ হওয়ার নয়। তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের দৈর্ঘ্য নিয়ে ভক্ত ও বিশ্লেষকদের আগ্রহ সব সময়ই তুঙ্গে থাকে। বিশেষ করে ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে তাঁর সম্ভাব্য অংশগ্রহণ নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা চলে আসছে। এত দিন বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে মেসি নিজেই তাঁর শতভাগ শারীরিক সক্ষমতার ওপর খেলার সম্ভাবনা নির্ভরশীল বলে জানিয়েছেন। এমনকি গত মাসে এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরি ২০২৬ সালের বিশ্বমঞ্চে উপস্থিত থাকার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন। তবে এবার এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি এক ভিন্ন আঙ্গিকে নিজের সেই সুপ্ত বাসনাকেই নতুন করে সামনে নিয়ে এলেন, যা তাঁর কোটি কোটি ভক্তদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে।
এক বিজ্ঞাপনে মেসির দৃঢ় বার্তা: ‘আমি এটা চাই’
সম্প্রতি আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের নতুন জার্সির উন্মোচন উপলক্ষে তৈরি একটি বিজ্ঞাপনে লিওনেল মেসি আবারও তাঁর ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ খেলার ইচ্ছার একটি জোরালো ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই বিজ্ঞাপনে মেসির পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলার এবং জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বিজারর্যাপ ও অভিজ্ঞ আনহেল দি মারিয়া অংশ নিয়েছেন। বিজ্ঞাপনটিতে ফুটবলারদের সঙ্গে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সভাপতি ক্লদিও তাপিয়াকে তাস খেলতে দেখা যায়। খেলার একপর্যায়ে যখন মেসির হাতে ‘চার’ সংখ্যা অঙ্কিত একটি তাস ওঠে, ঠিক তখনই তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলে ওঠেন, “আমি এটা চাই।”
এই সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যন্ত শক্তিশালী বার্তাটিকে ফুটবল বিশ্লেষক এবং ভক্তরা মেসির ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে খেলার ইচ্ছার এক সুস্পষ্ট প্রতীকী প্রকাশ হিসেবে দেখছেন। আর্জেন্টিনার জন্য চতুর্থ বিশ্বকাপ জয়ের যে ঐতিহাসিক স্বপ্ন, মেসির এই চাওয়া সেই স্বপ্নেরই এক প্রতিচ্ছবি হতে পারে। তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে দেশের জন্য আরেকটি বিশ্ব শিরোপা জেতার এই গভীর আকাঙ্ক্ষা তাঁকে আরও একবার সর্বোচ্চ স্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অনুপ্রাণিত করছে।
মেসির বর্ণিল বিশ্বকাপ যাত্রা ও অপূর্ণ স্বপ্ন
৩৮ বছর বয়সী লিওনেল মেসি জাতীয় দলের হয়ে এক বর্ণিল ও দীর্ঘ যাত্রা পাড়ি দিয়েছেন। তিনি আর্জেন্টিনার বয়সভিত্তিক দল থেকে শুরু করে মূল দলের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন। তাঁর অর্জনের ঝুলিতে রয়েছে ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে জেতা স্বর্ণপদকও। জাতীয় দলের জার্সিতে প্রায় দুই দশকের এই গৌরবময় যাত্রায় মেসি এরই মধ্যে পাঁচটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন। এই বিশাল অভিজ্ঞতা তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক:
- ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপ
- ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ
- ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ
- ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ
- ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ
দীর্ঘ অপেক্ষার পর, ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে তিনি অবশেষে সেই বহু প্রতীক্ষিত সোনালী ট্রফিটি হাতে তুলে নিতে সক্ষম হন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের একটি অপূর্ণ স্বপ্নকে পূর্ণতা দেয় এবং তাঁকে সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের তালিকায় আরও উঁচুতে স্থান করে দেয়।
ষষ্ঠ বিশ্বকাপের হাতছানি এবং ভক্তদের উন্মাদনা
২০২২ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে, মেসি হয়তো আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাবেন। কিন্তু তাঁর খেলার প্রতি অদম্য ভালোবাসা এবং দলের প্রতি অবিচল আনুগত্য তাঁকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এখন তাঁর দৃষ্টি নিবদ্ধ ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ আসরের দিকে, যেটি ২০২৬ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এর আগে যতবারই তাঁর কাছে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, মেসি কখনোই সরাসরি বা স্পষ্টভাবে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি সব সময়ই শারীরিক সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, সময় এলে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এবারের বিজ্ঞাপন চিত্রে তাঁর সাম্প্রতিক এই প্রতীকী ইঙ্গিত আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে এবং তাদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে। মেসির এই বার্তা কেবল একটি খেলার আকাঙ্ক্ষা নয়, বরং এটি কোটি কোটি মানুষের আবেগ ও স্বপ্নকে প্রতিনিধিত্ব করে। তাঁর মতো একজন কিংবদন্তির আবারও বিশ্ব মঞ্চে আবির্ভাবের সম্ভাবনা ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এক অসাধারণ মুহূর্তের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসে।
