ফুটবল বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ফিফা ‘দ্য বেস্ট’-এর জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে আবারও উত্তাপ ছড়াল বিশ্ব ফুটবলের আঙিনায়। ব্যালন ডি’অরের মঞ্চে লড়বার পর এবার ফিফার বর্ষসেরার শিরোপার দৌড়ে মুখোমুখি হয়েছেন ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা দুই তারকা, উসমান দেম্বেলে এবং লামিনে ইয়ামাল। এই দুই প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফুটবল মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে ব্যালন ডি’অরের জেতা দেম্বেলে মানসিকভাবে খানিকটা এগিয়ে থেকেই এই লড়াইয়ে শামিল হচ্ছেন।
দেম্বেলে বনাম ইয়ামাল: শ্রেষ্ঠত্বের নতুন লড়াই
ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কারের এবারের আসরে পিএসজির ফরাসি তারকা উসমান দেম্বেলের পাল্লাই অপেক্ষাকৃত ভারি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত মৌসুমে পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ ঐতিহাসিক ‘ট্রেবল’ জয়ের পেছনে তাঁর অসামান্য অবদান ছিল। ৫৩ ম্যাচে ৩৫ গোল করার পাশাপাশি ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ গোল করিয়েছেন তিনি, যা তাঁর আক্রমণাত্মক ফুটবলের ধারাল প্রমাণ। তাঁর গতি, ড্রিবলিং এবং ফিনিশিং ক্ষমতা প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের জন্য রীতিমতো বিভীষিকা সৃষ্টি করেছিল। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, কেন তিনি এবারের পুরস্কারের অন্যতম প্রধান দাবিদার।
অন্যদিকে, বার্সেলোনার বিস্ময়-বালক লামিনে ইয়ামালও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। যদিও ইউরোপীয় ফুটবলে তাঁর দলের সাফল্য দেম্বেলের মতো না হলেও, তিনি বার্সেলোনার হয়ে ঘরোয়া ‘ট্রেবল’ জয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। ৫৫ ম্যাচে ১৮ গোল এবং ২৫টি অ্যাসিস্টের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন তাঁর অপরিণত বয়স কেবলই একটি সংখ্যা। ইয়ামালের খেলাধুলায় মুগ্ধতা ছড়িয়েছে তাঁর অসাধারণ দৃষ্টিশক্তি, নিখুঁত পাস এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে গোল করার ক্ষমতা। তাঁর এই দুর্বার পারফরম্যান্স তাঁকে দ্রুতই বিশ্ব ফুটবলের তারকাদের কাতারে নিয়ে এসেছে। দেম্বেলের অভিজ্ঞতা এবং ইয়ামালের তরুণ তুর্কি প্রতিভা, দুইয়ে মিলে এবারের ‘দ্য বেস্ট’ পুরস্কারের লড়াইকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছে।
অন্যান্য তারকা এবং কোচের প্রতিদ্বন্দ্বিতা
মনোনীতদের তালিকায় দেম্বেলে ও ইয়ামাল ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন বিশ্বসেরা ফুটবলার স্থান পেয়েছেন। পিএসজি থেকে আশরাফ হাকিমি, ভিতিনিয়া এবং নুনো মেন্দেসের মতো তারকারা জায়গা করে নিয়েছেন, যারা নিজেদের দলের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পের গোলমেশিন পারফরম্যান্স তাঁকে এই দৌড়ে রেখেছে। বায়ার্ন মিউনিখ থেকে হ্যারি কেইন, চেলসি থেকে কোল পালমার, বার্সেলোনা থেকে পেদ্রি ও রাফিনিয়া এবং লিভারপুল থেকে মোহাম্মদ সালাহর মতো প্রতিষ্ঠিত তারকারাও রয়েছেন এই তালিকায়। প্রতিটি নামই নিজ নিজ ক্লাব ও দেশের হয়ে গত মৌসুমে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। তবে, সব জল্পনা-কল্পনা শেষে এই পুরস্কারটি দেম্বেলে কিংবা ইয়ামালের হাতেই উঠবে বলে ক্রীড়ামহলে জোরালো ধারণা প্রচলিত।
খেলোয়াড়দের পাশাপাশি, সেরা কোচের লড়াইয়েও এবার হতে চলেছে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। গত মৌসুমের সফল কোচরা এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। পিএসজির লুইস এনরিকে, যিনি দলকে ট্রেবল জিতিয়েছেন; বার্সেলোনার হ্যান্সি ফ্লিক, যিনি ঘরোয়া ফুটবলে দলটিকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছেন; এবং লিভারপুলের আর্নে স্লট, যিনি তার দলকে সুসংগঠিত করে সাফল্য এনে দিয়েছেন — এই তিনজনের মধ্যে যে কোনো একজন এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি জিততে পারেন। তাঁদের কৌশলগত মেধা এবং নেতৃত্ব গুণাবলী তাঁদেরকে এই উচ্চ অবস্থানে এনেছে।
নারী ফুটবলে আধিপত্য ও প্রত্যাশা
নারী খেলোয়াড়দের মনোনীতদের তালিকায় প্রধানত আর্সেনাল, চেলসি এবং বার্সেলোনার তারকারা স্থান পেয়েছেন, যা এই ক্লাবগুলোর নারী ফুটবল দলের দাপট প্রমাণ করে। এই তালিকায় নারী ব্যালন ডি’অর বিজয়ী আইতানা বোনমাতি বাকিদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন। তাঁর ধারাবাহিক পারফরম্যান্স এবং দলের প্রতি তাঁর অবদান তাকে এই পুরস্কারের অন্যতম প্রধান দাবিদার করে তুলেছে। এছাড়া, ইংল্যান্ডকে ইউরো জেতানোর স্বীকৃতিস্বরূপ ইংল্যান্ড নারী দলের কোচ সারিনা উইগম্যানও নারী কোচের ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ পুরস্কার জিততে পারেন। তাঁর অধীনে ইংল্যান্ড নারী দলের সাফল্য ছিল এক ঐতিহাসিক অর্জন, যা তাকে এই পুরস্কারের জন্য যোগ্যতম প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছে।
সামনের দিনগুলোতে এই পুরস্কারগুলো কার হাতে ওঠে, তা দেখার জন্য ফুটবলপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। এই মনোনয়নগুলো শুধুমাত্র খেলোয়াড় ও কোচেদেরই সম্মান জানায় না, বরং ফুটবল খেলার সার্বিক উন্নয়নেও অনুপ্রেরণা যোগায়।
