বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাঙ্গনে সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টিকারী সাবেক জাতীয় দলের ক্রিকেটার জাহানারা আলমের যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগ তদন্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই পদক্ষেপটি নারী ক্রিকেটারদের জন্য একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার বিসিবির অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন। আশা করা হচ্ছে, এই কমিটি একটি সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন তদন্তের মাধ্যমে যাবতীয় অভিযোগের সত্যতা উন্মোচন করবে এবং নারী ক্রিকেটের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশমালা প্রদান করবে।
তদন্ত কমিটির গঠন ও কার্যপরিধি
বিসিবি গঠিত এই বিশেষ তদন্ত কমিটি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এবং সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা বোর্ডের কাছে জমা দেবে বলে নির্ধারিত হয়েছে। এই কমিটি গঠন করার মূল উদ্দেশ্য হলো, অভিযোগের গভীরে গিয়ে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহ করা এবং ভবিষ্যতে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি তারিক উল হাকিম। তার এই পদায়ন তদন্ত প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। কমিটির অন্য দুই সম্মানিত সদস্য হলেন বিসিবির অন্যতম পরিচালক রুবাবা দৌলা এবং বাংলাদেশ নারী ক্রীড়া সমিতির সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লা। এই ত্রয়ী তাদের প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা এবং আইনগত জ্ঞান ব্যবহার করে জটিল এই বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করবেন।
যৌন হয়রানি ও অন্যান্য অভিযোগের বিস্তারিত
আলোচ্য অভিযোগের মূলে রয়েছে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক নির্বাচক ও টিম ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু এবং প্রয়াত সাবেক ইনচার্জ তৌহিদ মাহমুদ-এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগ। জাহানারা আলমের দাবি, তিনি এই বিষয়ে বিসিবির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পূর্বে একাধিকবার অভিযোগ জানালেও কোনো প্রকার প্রতিকার পাননি, যা তাকে আরও হতাশাগ্রস্ত করেছে। এই বিষয়টি নারী ক্রিকেটারদের জন্য অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া এবং প্রতিকার ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
কেবল যৌন হয়রানির অভিযোগই নয়, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে জাতীয় দলের আরও বেশ কয়েকজন নারী ক্রিকেটার মুখ খুলেছেন এবং তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। এর মাধ্যমে নারী ক্রিকেট দলে বিদ্যমান আরও কিছু সমস্যার চিত্র ফুটে উঠেছে। এছাড়া, বর্তমানে জাতীয় দলে খেলছেন এমন কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে দলীয় কোন্দল ও গ্রুপিং সৃষ্টির অভিযোগও উঠেছে, যা দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা এবং সামগ্রিক পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিসিবি গঠিত এই কমিটি এই সকল অভিযোগ, যার মধ্যে ব্যক্তিগত হয়রানি থেকে শুরু করে দলগত বিভাজন পর্যন্ত সমস্ত দিক অন্তর্ভুক্ত, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে দেখবে। এই তদন্তের ফলাফল এবং সুপারিশগুলো নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
