দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে সরকার। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এই বহুল প্রতীক্ষিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, যা দেশের সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে সহায়ক হবে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে আগামী বছরের জন্য সাধারণ ও নির্বাহী আদেশাধীন ছুটির পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য ঐচ্ছিক ছুটির বিস্তারিত রূপরেখা উন্মোচিত হয়েছে।
২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকা: বিস্তারিত ঘোষণা
গতকাল রোববার (৯ নভেম্বর, ২০২৫) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই তালিকা অনুযায়ী, নতুন বছরে মোট ১৪ দিন সাধারণ ছুটি হিসেবে বিবেচিত হবে। এর পাশাপাশি, সরকারের নির্বাহী আদেশে আরও ১৪ দিন ছুটি ভোগ করার সুযোগ থাকবে। অর্থাৎ, সাধারণ এবং নির্বাহী আদেশ মিলিয়ে মোট ২৮ দিন সরকারি ছুটি থাকবে, যা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এক স্বস্তিদায়ক খবর।
এই প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্থ সকল সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহে এই ছুটির তালিকা অনুসরণ করা হবে। এর ফলে সারা দেশের কর্মজীবীরা একটি সুনির্দিষ্ট ছুটির পঞ্জিকা অনুযায়ী নিজেদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত পরিকল্পনা সাজাতে পারবেন।
ঐচ্ছিক ছুটির বিস্তারিত বিন্যাস ও নিয়মাবলী
সাধারণ ও নির্বাহী আদেশাধীন ছুটির পাশাপাশি ২০২৬ সালের জন্য ঐচ্ছিক ছুটির একটি বিস্তারিত তালিকাও ঘোষণা করা হয়েছে। নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস ও উৎসব পালনের সুবিধার্থে কর্মচারীরা এই ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করতে পারবেন। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য ঐচ্ছিক ছুটির সংখ্যা নিম্নরূপ:
- মুসলিম পর্বের কর্মচারীরা মোট ৫ দিন ঐচ্ছিক ছুটি নিতে পারবেন।
- হিন্দু ধর্মাবলম্বী কর্মচারীদের জন্য মোট ৯ দিন ঐচ্ছিক ছুটি নির্ধারিত হয়েছে।
- খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী কর্মচারীরা মোট ৮ দিন ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করতে পারবেন।
- বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কর্মচারীদের জন্য মোট ৭ দিন ঐচ্ছিক ছুটি রয়েছে।
- এছাড়াও, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কর্মচারীদের জন্য মোট ২ দিন ঐচ্ছিক ছুটি নির্ধারিত হয়েছে, যা তাদের নিজস্ব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব পালনে সহায়তা করবে।
তবে, এই ঐচ্ছিক ছুটির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আরোপ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, একজন কর্মচারী তাঁর নিজ ধর্ম অনুযায়ী বছরে অনধিক মোট ৩ (তিন) দিনের ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করার অনুমতি পাবেন। এই ছুটি ভোগের জন্য প্রতিটি কর্মচারীকে বছরের শুরুতেই উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে। এটি কর্মীদের ছুটির পরিকল্পনাকে আরও সুসংগঠিত করতে সাহায্য করবে।
ঐচ্ছিক ছুটি ভোগের ক্ষেত্রে কর্মীদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে। তাঁরা এই ছুটি সাধারণ ছুটি, নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি এবং সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে যুক্ত করে ভোগ করতে পারবেন। এই নমনীয়তা কর্মীদের জন্য দীর্ঘ ছুটি কাটানোর এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ তৈরি করবে।
তবে, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এই নিয়ম কিছুটা ভিন্ন হবে। যেসব অফিসের সময়সূচি ও ছুটি তাদের নিজস্ব আইন-কানুন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে অথবা যেসব অফিস, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের চাকরি সরকার কর্তৃক অত্যাবশ্যক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অফিস, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আইন-কানুন অনুযায়ী জনস্বার্থ বিবেচনা করে এই ছুটি ঘোষণা করবে। এটি দেশের অপরিহার্য সেবাসমূহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য একটি বিচক্ষণ পদক্ষেপ।
অন্তর্বর্তী সরকারের অনুমোদন: একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া
উল্লেখ্য, এই সরকারি ছুটির তালিকা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর, ২০২৫) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। উপদেষ্টা পরিষদের সম্মতির পরই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তালিকাটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেছে। এই আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া ছুটির তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করেছে।
২০২৬ সালের এই ছুটির তালিকা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি তাদের পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব পালনের সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি দেশের সার্বিক কার্যক্রমেও গতিশীলতা আনবে।
