আজ বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকাজুড়ে এক উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক ঘোষিত ‘অনলাইন লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজপথে নেমে আসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা। এই কর্মসূচি ঘিরে যেমন বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়, তেমনি কিছু জায়গায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগ এবং ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটে, যা সামগ্রিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তোলে।
আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ ও তার প্রেক্ষাপট
বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার মূল কারণ হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল মামলার রায় ঘোষণার তারিখ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগ একটি অভিনব ‘অনলাইন ঘোষিত লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের মতো নাশকতামূলক কার্যক্রমের খবর পাওয়া যায়, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
বিএনপি-জামায়াতের রাজপথে অবস্থান ও প্রতিরোধ
আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচিকে প্রতিরোধ করতে এবং যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা সুসংগঠিতভাবে রাজপথে নেমে আসেন। ভোর থেকেই তাঁরা রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে লাঠিসোঁটা হাতে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কোথাও কোথাও মিছিলের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেন।
-
সকাল ৭টার আগেই পশ্চিম ঢাকার শ্যামলী এলাকায় বিএনপির কর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে সংঘবদ্ধভাবে মিছিল বের করে তাদের উপস্থিতি জানান দেন।
-
ভোর থেকেই মাজার রোড এলাকায় জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সড়কের পাশে চেয়ার পেতে এবং লাঠি হাতে সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন, যা তাদের দৃঢ় সংকল্পের ইঙ্গিত দেয়।
-
ইসলামী সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনেও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নেন।
-
যাত্রাবাড়ী এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানা জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি সুশৃঙ্খল মিছিল বের করেন।
-
এর পরপরই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হাইকোর্ট এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের একটি মিছিল দেখা যায়, যা তাদের সংগঠিত কার্যক্রমের অংশ ছিল।
-
একইভাবে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন ঘিরেও লাঠিসোঁটা হাতে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে দেখা যায়।
-
সকাল ১০টার পরে যাত্রাবাড়ী মোড়ে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা আবার সম্মিলিতভাবে অবস্থান নিয়ে শোভাযাত্রা করেন।
ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা
এই রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে যেকোনো ধরনের নাশকতা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রায় ঘোষণার তারিখ এবং আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতা ঠেকাতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ১৭ হাজার সদস্যের বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এটি বর্তমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মাত্রা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। সার্বিকভাবে, আজ ঢাকা শহরের প্রতিটি প্রান্তে উত্তেজনাপূর্ণ ও সতর্কতামূলক একটি পরিবেশ বিরাজ করছে।
