বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বক্তব্যে দেশের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া এবং সংসদীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন যে, কেবল গণভোটের মাধ্যমে আইন প্রণয়ন কিংবা সংবিধান সংশোধন সম্ভব নয়। এই ধরনের মৌলিক পরিবর্তনের জন্য সর্বপ্রথম একটি কার্যকর জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়া অত্যাবশ্যক। তাঁর এই মন্তব্য দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং আসন্ন নির্বাচন ও গণভোট সংক্রান্ত আলোচনার মাঝে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গণভোট ও সংসদীয় সার্বভৌমত্বের অবিচ্ছেদ্য বন্ধন
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে শুক্রবার, ১৬ই মে, এই বলিষ্ঠ মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তাঁর বক্তব্যের মূল সুর ছিল, সংবিধানের বিধিমালা অনুসরণ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন। তিনি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, গণভোট যদিও জনমতের একটি শক্তিশালী প্রকাশ, তবে এটি সরাসরি আইন প্রণয়ন বা সংবিধান সংশোধনের হাতিয়ার হতে পারে না। এই প্রক্রিয়াগুলো সম্পাদনের জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের অনুমোদন ও কার্যক্রম অপরিহার্য। এটি বাংলাদেশের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির মূল ভিত্তি।
আলোচ্য এই কর্মসূচির আয়োজক ছিল নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম, যা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে এই মৌন মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল – ‘নারীর উপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’। এই সমাবেশ কেবল নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সজাগ থাকার আহ্বান জানায়নি, বরং একই সাথে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশের ওপরও আলোকপাত করেছে।
আসন্ন নির্বাচন ও গণভোট: এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সম্প্রতি এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘোষণা এসেছে। গতকাল, বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানান যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই যুগপৎ সিদ্ধান্তের কথা শুনে সালাহউদ্দিন আহমদ এটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করবে এবং জনগণের মতামত প্রকাশের সুযোগ বিস্তৃত করবে।
জুলাই জাতীয় সনদ: বিএনপির অঙ্গীকার ও দৃঢ় অবস্থান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে সালাহউদ্দিন আহমদ জুলাই জাতীয় সনদের প্রতি দলের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, যেভাবে এই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, বিএনপি তার প্রতিটি ধারা প্রতিপালনে বদ্ধপরিকর। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও সতর্ক করেন, যদি এর বাইরে কোনো চাপিয়ে দেওয়া বা জবরদস্তিমূলক প্রস্তাব সামনে আনা হয়, তবে বাংলাদেশের জনগণ তা কখনোই বিবেচনা করবে না। এই ধরনের আরোপিত প্রস্তাব জনমত ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে বিবেচিত হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিএনপির অটল অবস্থানের কথা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্ব কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন হোক, তা বিএনপি কখনোই চায় না। দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থার মর্যাদা ও ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখা তাদের প্রধান লক্ষ্য। এজন্য, কোনো আরোপিত আইন, আদেশ অথবা জবরদস্তিমূলক প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ তাঁরা মেনে নেবেন না। এটি দেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার ও নারী অধিকারের অবমূল্যায়ন
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আরেকটি উদ্বেগজনক প্রবণতার বিষয়েও সালাহউদ্দিন আহমদ মন্তব্য করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, একটি নির্দিষ্ট দল ধর্মকে তাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ব্যবসায়িক ফায়দা লুটছে। এই ধরনের অপব্যবহারের ফলস্বরূপ সমাজের দুর্বল অংশ, বিশেষ করে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছেন। তিনি বলেন, এই গোষ্ঠী চায় দেশের নারীরা যেন চার দেয়ালের অন্দরমহলে আবদ্ধ থাকে, যাতে বাংলাদেশের অর্ধেক জনসমষ্টি উন্নয়নের আলো থেকে বঞ্চিত থাকে এবং অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। তাদের মূল উদ্দেশ্যই হলো নারীর অগ্রগতি ও উন্নতিকে রুদ্ধ করে একটি পশ্চাৎপদ সমাজব্যবস্থা ধরে রাখা। সালাহউদ্দিন আহমদ এই মানসিকতার তীব্র নিন্দা জানান এবং সমাজের সকল স্তরে নারীর সমঅধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
