More

    গোঁজামিলের গণভোট অগ্রহণযোগ্য: বাংলাদেশ জাসদ

    দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন জাতীয় ঐকমত্যের গুরুত্ব অনস্বীকার্য, ঠিক তখনই বাংলাদেশ জাসদ সরকারের প্রতি এক কঠোর সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে। দলটি স্পষ্ট জানিয়েছে যে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা ও সুপারিশমালার বাইরে কোনো বিষয় যদি সরকার চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে তা বিদ্যমান অনৈক্যকে আরও গভীর করবে এবং এর সমাধানকে অসম্ভব করে তুলবে। বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান এই গভীর উদ্বেগের কথা ব্যক্ত করেন।

    সংবিধান সংস্কার ও গণভোটের যৌক্তিকতা: জাসদের বিশ্লেষণ

    বিবৃতিতে সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে বাংলাদেশ জাসদ তাদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরে। দলটির মতে, সংবিধান সংস্কারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জাতীয় সংসদে বিস্তারিত আলোচনার পূর্বেই গণভোটের আয়োজন সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়। তবে, যদি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কোনো বিষয়ে সর্বসম্মত প্রস্তাব আসে, সেগুলোর ওপর গণভোট গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু এই ধরনের গণভোটের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করা সম্ভব নয়—এই বিষয়ে জাসদ তাদের অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেছে। এছাড়া, বর্তমান সংবিধান কার্যকর থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতির আদেশ জারি করে কোনো পরিবর্তন আনাকে তারা সংবিধানসম্মত বলে মনে করেন না। একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ জাসদ প্রস্তাব করেছে যে, প্রয়োজনে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাথে একই সময়ে গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে, যা প্রক্রিয়াটিকে আরও সুসংগঠিত করবে এবং অপ্রয়োজনীয় জটিলতা পরিহার করবে।

    জাতীয় সংসদের মর্যাদা ও বিতর্কিত ‘জুলাই সনদ’

    জাতীয় সংসদের মর্যাদা ও সাংবিধানিক অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ জাসদ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে জাতীয় সংসদকে নতুন কোনো নামে অভিহিত করা অথবা এর দ্বৈত সত্তা প্রদানের প্রচেষ্টাকে সংবিধানবিরোধী উল্লেখ করা হয়েছে। দলটির কঠোর সমালোচনা ছিল ‘জুলাই সনদ’ নামে পরিচিত কতিপয় দলের অবাস্তব দাবিগুলোকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা নিয়ে। তাদের মতে, এটি কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচায়ক হতে পারে না এবং এটি একটি অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চাপিয়ে দেওয়ার নামান্তর।

    প্রস্তাবিত গণভোটের প্রক্রিয়ার দুর্বলতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে জাসদ বলেছে যে, গণভোটের জন্য যেভাবে চারটি প্রশ্ন প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বস্তুত এই গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে একটি হাসিঠাট্টার বিষয়ে পরিণত করেছে। এমন অগভীর এবং অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নমালা একটি গণভোটের গুরুত্বকে সম্পূর্ণরূপে খর্ব করে।

    যদিও বাংলাদেশ জাসদ যথাসময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজনকে wholeheartedly স্বাগত জানায়, তবে তারা স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছে যে, এই অসংগতিপূর্ণ ও গোঁজামিলপূর্ণ গণভোটকে কোনোভাবেই তারা গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। জাতি এখন আর কোনো বিলম্ব চায় না; তারা প্রত্যাশা করে যে, নির্বাচন কমিশন কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সঠিক পথে চালিত করবে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here