More

    ‘উপদেষ্টার ভাই নাহিদ ইসলামকে ধমকাইয়া আমাকে বহিষ্কার করাইছে’

    জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল (এনসিপি) এর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চরম অস্থিরতা ও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে দলের বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় সংগঠক মুনতাসির মাহমুদ এর বিস্ফোরক অভিযোগ। তিনি দাবি করেছেন, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এর ভাই মাহবুব আলম এর প্রচ্ছন্ন প্রভাব ও চাপের মুখে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন। গত শনিবার, ১৫ই নভেম্বর, নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত একটি সুদীর্ঘ পোস্টে মুনতাসির মাহমুদ এই গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেন, যা ইতিমধ্যে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

    বহিষ্কারের নেপথ্যে প্রভাবশালী চাপ: মুনতাসিরের চাঞ্চল্যকর দাবি

    মুনতাসির মাহমুদ তার ফেসবুক পোস্টে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন যে, তার বহিষ্কারের পেছনে কোনো সাংগঠনিক কারণের চেয়েও বেশি কাজ করেছে একটি প্রভাবশালী মহলের অন্যায় চাপ। তিনি সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এর ভাই মাহবুব আলম এর দিকে। মুনতাসিরের মতে, মাহবুব আলমের প্রভাব খাটিয়েই এনসিপি এর শীর্ষ নেতৃত্ব, বিশেষত আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, তাকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। এই অভিযোগ এনসিপির অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপের বিষয়টি নতুন করে সামনে এনেছে।

    মুনতাসিরের মর্মস্পর্শী অভিযোগ: দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ

    নিজের বহিষ্কারাদেশ নিয়ে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে মুনতাসির মাহমুদ তার পোস্টে লেখেন, “মানুষ নিজে যতক্ষণ না বিপদে পড়ে, ততক্ষণ প্রকৃত অবস্থা বোঝে না। বরং আরেকজনের বিপদে মজা নেয়।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে বিদ্যমান সুবিধাবাদ ও সহানুভূতির অভাবের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, এনসিপি এর কতিপয় নেতার দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সমালোচনা বা অবস্থান হঠাৎ করে তার বহিষ্কারের পর শুরু হয়নি। বরং, বহু আগে থেকেই তিনি এই অনিয়মের প্রতিবাদ করে আসছিলেন।

    মুনতাসির মাহমুদ আরও স্মরণ করিয়ে দেন যে, অতীতেও এনসিপি থেকে অনেক যোগ্য ও প্রতিভাবান ব্যক্তিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কারণ তারা দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের “দাসত্ব” মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। উদাহরণ হিসেবে তিনি জুনায়েদ ভাই এবং রাফে ভাইদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আজ আবারও বলতে চাই, জুনায়েদ ভাই, রাফে ভাইরা দলীয় পদের কারণে এনসিপি ছাড়েননি, বরং দুর্নীতিবাজ কোরামের কাছে মাথা নত করবেন না বলেই বের হয়ে আপ বাংলাদেশ করেছেন।” তার এই বক্তব্য এনসিপির অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। এই ধরনের অভিযোগ দলের ভাবমূর্তির উপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

    ব্যক্তিগত আক্রমণ ও সম্মানহানির যন্ত্রণাময় অধ্যায়

    মুনতাসির মাহমুদ তার পোস্টে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, কীভাবে তাকে ব্যক্তিগতভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বারবার সাংগঠনিক নিয়ম মেনে অভিযোগ করেছেন, দলের সাধারণ সভায় বিষয়টি তুলেছেন এবং শীর্ষস্থানীয় সকল নেতাকে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন, তবুও তার পরিচয়ের বিষয়ে অস্পষ্টতা দূর করা হয়নি। তিনি ক্ষোভের সাথে প্রশ্ন করেছেন, “তবু কেন আমি যে ওই সমকামী মুনতাসির না, এটা পরিষ্কার করা হলো না? এনসিপি এর সহযোদ্ধারা কোনো যৌক্তিক জবাব দিতে পারবেন?”

    মুনতাসির তার অনুসারী ও সতীর্থদের প্রতি একটি সংবেদনশীল আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার জায়গায় নিজেকে ভাবেন। আপনাকে যদি মানুষ সমকামী/গে বলে, আপনার ছবি দিয়ে সমকামী বানাইয়া নিউজ করে, সেটা আপনার বাবা-মা দেখে, প্রতিবেশীরা দেখে, কেমন লাগবে? যদি আপনার আত্মীয়-স্বজন আপনার মা-বাবাকে প্রশ্ন করে, আপনার ছেলে কি গে? নিউজে দেখলাম, সমকামিতার অভিযোগে বহিষ্কার করছে দল থেকে, এটা কি সত্যি? আপনার কেমন লাগবে?” এই প্রশ্নগুলো তার মানসিক যন্ত্রণা, সামাজিক লাঞ্ছনা এবং সম্মানহানির গভীরতা তুলে ধরে। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক বহিষ্কারের ঘটনা নয়, বরং একজন ব্যক্তির চরিত্রহনন ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবেও প্রতীয়মান হচ্ছে।

    ন্যায়বিচারের দাবি ও প্রমাণ উপস্থাপনের অঙ্গীকার

    মুনতাসির মাহমুদ দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে, তিনি যা করেছেন, তা কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে করেছেন। তিনি তার অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “আপনারা প্রমাণ খোঁজেন, দেব আমি।” একই সাথে তিনি উল্লেখ করেন যে, গত এক মাসে তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়গুলোর বিষয়ে তিনি ইতিমধ্যেই অনেক প্রমাণ দিয়েছেন। এই মন্তব্যগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, মুনতাসির মাহমুদ তার অভিযোগের পেছনে শক্ত ভিত্তি এবং পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ নিয়েই দাঁড়িয়েছেন, যা এনসিপি এর নেতৃত্বের জন্য এক নতুন সংকট তৈরি করতে পারে। তার এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে এনসিপির রাজনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here