More

    বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায় কুরাসাও

    ফুটবল বিশ্ব সাক্ষী হতে চলেছে এক অভূতপূর্ব ইতিহাসের। মহাদেশীয় গণ্ডি পেরিয়ে বৈশ্বিক ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর, ফিফা বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার স্বপ্নপূরণের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে এক বিস্ময়কর নাম – কুরাসাও। ক্যারিবীয় সাগরের বুকে অবস্থিত এই ছোট্ট দেশটি যদি শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করতে পারে, তবে তা কেবল তাদের জন্য নয়, বরং বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসেই এক নতুন অধ্যায় রচনা করবে। পৃথিবীর অন্যতম ক্ষুদ্রতম এই রাষ্ট্রটি বৈশ্বিক ক্রীড়ামঞ্চে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে প্রস্তুত, যা ছোট দেশগুলোর জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

    মাত্র ১ লাখ ৫৬ হাজার জনসংখ্যা এবং ৪৪৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রটি যদি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার সুযোগ পায়, তবে তারা নিঃসন্দেহে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে নতুন এক রেকর্ড গড়বে। এর আগে আয়তনের নিরিখে বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জনকারী ক্ষুদ্রতম দেশ ছিল কেপ ভার্দে, যার আয়তন প্রায় ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। কুরাসাও সেই রেকর্ডকে প্রায় দশগুণ কমিয়ে এনে এক অবিশ্বাস্য মাইলফলক স্থাপনের অপেক্ষায়। তাদের এই সম্ভাব্য অর্জন প্রমাণ করবে যে, আকাঙ্ক্ষা এবং কঠোর পরিশ্রমের কাছে আকার কোনো বাধা নয়।

    নিজেদের বিশ্বকাপের স্বপ্ন পূরণের পথে দুর্দান্ত এক ফর্মে রয়েছে কুরাসাও। সম্প্রতি হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত এক রোমাঞ্চকর ম্যাচে তারা বারমুডাকে ৭-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে। এই দাপুটে জয় তাদের আত্মবিশ্বাসকে তুঙ্গে নিয়ে গেছে এবং বিশ্বকাপের মূল পর্বে যাওয়ার পথ অনেকটাই সুগম করেছে। এখন ১৯শে নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য তাদের চূড়ান্ত কোয়ালিফায়ার ম্যাচে শক্তিশালী জ্যামাইকার বিপক্ষে একটি ড্রই যথেষ্ট হবে ফিফা বিশ্বকাপের মূল পর্বে নিজেদের স্থান পাকা করার জন্য। ফুটবলপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্য।

    বৈশ্বিক ফুটবল মঞ্চে কুরাসাও এর পরিচিতি অবশ্য নতুন নয়। ২০২৩ সালের মার্চে তারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে মাঠে নেমেছিল। সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে যদিও লিওনেল মেসির হ্যাটট্রিক সহ আর্জেন্টিনা ৭-০ গোলে জয়লাভ করে, তবুও সেই খেলাটি কুরাসাওকে বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে খেলার এই অভিজ্ঞতা তাদের আন্তর্জাতিক পরিচিতি বাড়ায় এবং ফুটবল বিশ্বে তাদের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। সেই পরিচয়ের পর এবার তারা সত্যিকার অর্থেই ইতিহাস রচনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে, যা তাদের ফুটবলার এবং সমগ্র জাতির জন্য এক অভূতপূর্ব গর্বের বিষয় হবে।

    ভৌগোলিক অবস্থান ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

    ক্যারিবীয় সাগরের নীল জলরাশিতে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার ঠিক উত্তরে অবস্থিত কুরাসাও। ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণ আমেরিকার কাছাকাছি হলেও, তারা ফুটবলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কনক্যাকাফ (CONCACAF) অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে, যা উত্তর, মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় দেশগুলির ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে গঠিত। এই মনোরম দেশটি মূলত দুটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত: একটি হলো কুরাসাও মূল দ্বীপ, যেখানে অধিকাংশ জনসংখ্যা বাস করে এবং দেশের প্রধান অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র অবস্থিত, এবং অন্যটি হলো জনবসতিহীন ‘লিটল কুরাসাও’, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নির্জনতার জন্য পরিচিত।

    ঐতিহাসিকভাবে, কুরাসাও এর একটি সমৃদ্ধ ও পরিবর্তনশীল পটভূমি রয়েছে। ১৮১৫ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত এটি কুরাসাও অ্যান্ড ডিপেনডিন্সিস কলোনির অংশ ছিল, যা ডাচ উপনিবেশিক শাসনের অধীনে পরিচালিত হতো। পরবর্তীতে, ১৯৫৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এটি নেদারল্যান্ডস এন্টিলিসের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ২০১০ সালে নেদারল্যান্ডস এন্টিলিসের বিলুপ্তির পর কুরাসাও নেদারল্যান্ডস রাজ্যের একটি স্বতন্ত্র উপাদান দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যা তাদের স্বকীয়তা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই দীর্ঘ ঔপনিবেশিক এবং স্বায়ত্তশাসিত ইতিহাস তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং অনন্য পরিচিতিতে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে, যা তাদের ফুটবল দলের মধ্যেও প্রতিফলিত হয় এবং তাদের খেলার শৈলীতে একটি বিশেষত্ব এনে দিয়েছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here