More

    জাতীয় দলে খেলে ফুটবলাররা চোট পেলে ক্লাব কি ক্ষতিপূরণ পায়

    ফুটবল বিশ্বের এক চিরায়ত টানাপোড়েন ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবলের মধ্যে। একদিকে যখন ক্লাবগুলো তাদের খেলোয়াড়দের নিয়ে বড় বড় লক্ষ্য পূরণে ব্রতী হয়, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিরতিতে দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামার ডাক আসে। এই উভয়সঙ্কটময় পরিস্থিতিতেই ক্লাবগুলোর জন্য এক বড় দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দেয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে খেলোয়াড়দের চোটে ফেরা। ১০-১২ দিনের বিরতি শেষে যখন দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা ইনজুরি নিয়ে ফিরে আসেন, তখন তাদের পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে অনুপস্থিতি ক্লাবগুলোর পরিকল্পনায় বড় ধরনের আঘাত হানে, যা কাটিয়ে ওঠা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এটি এমন একটি সমস্যা যার কোনো সহজ বা বাস্তবসম্মত সমাধান আজও নেই, এবং ক্লাবগুলোকে প্রায়শই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে হয়।

    আন্তর্জাতিক বিরতিতে খেলোয়াড়দের চোট: ক্লাবের দুঃস্বপ্ন

    যেকোনো ফুটবল কোচের কাছেই এই পরিস্থিতি এক ঘোর দুঃস্বপ্নের মতো। আন্তর্জাতিক বিরতি মানেই ক্লাবের সেরা খেলোয়াড়দের নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ছেড়ে দেওয়া। কিন্তু এই ছাড়পত্রই অনেক সময় বড় মাসুলের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণত দেখা যায়, ১০ দিনের আন্তর্জাতিক বিরতি শেষে খেলোয়াড়রা নিজ দেশের হয়ে ম্যাচ খেলে চোট নিয়ে ক্লাবে ফিরছেন। এর ফলে ক্লাবগুলোর জন্য মারাত্মক সংকট তৈরি হয়, কারণ পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ কিছু ম্যাচে তারা এই চোটপ্রাপ্ত তারকাদের পাবে না। প্রিমিয়ার লিগ বা চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো প্রতিযোগিতামূলক আসরে এমন অনুপস্থিতি দলের পারফরম্যান্সে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দলের মূল একাদশ বিঘ্নিত হয়, কৌশলগত পরিবর্তন আনতে হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হারানোর ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এই এক ঝুঁকি যা ক্লাব ফুটবল এবং আন্তর্জাতিক ফুটবলকে সমান্তরালভাবে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করতে হয়, যার প্রতিরোধের কোনো কার্যকর উপায় এখনও উদ্ভাবিত হয়নি।

    আর্সেনালের উদ্বেগ: গ্যাব্রিয়েল জেসাসের চোট

    সাম্প্রতিক সময়ে এই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম শীর্ষ ক্লাব আর্সেনাল। গত শনিবার সেনেগালের বিপক্ষে ব্রাজিলের ২-০ গোলের প্রীতি ম্যাচে তাদের অন্যতম তারকা ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল জেসাস চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লে পুরো আর্সেনাল শিবিরে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তি নিজেও এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা হতাশ এবং খুবই দুঃখিত। চোটের ধরন কতটা খারাপ, তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। সে অ্যাডাক্টরে চোট পেয়েছে এবং আমাদের চিকিৎসক দল তার দেখভাল করছে।”

    চলতি মৌসুমে আর্সেনালের আক্রমণভাগে এবং রক্ষণে (যদি তিনি ডিফেন্ডার গ্যাব্রিয়েল ম্যাগালহেস হতেন) গ্যাব্রিয়েল জেসাস এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন। তার গতি, দক্ষতা এবং গোল করার ক্ষমতা দলকে বহু ম্যাচে জয় এনে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, আর্সেনাল কর্তৃপক্ষ চাইবে যত দ্রুত সম্ভব এই তারকা খেলোয়াড়কে সুস্থ অবস্থায় মাঠে ফিরে পেতে। কেননা, সামনের দুটি সপ্তাহ আর্সেনালের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রিমিয়ার লিগে টটেনহাম ও চেলসির মতো কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচ খেলতে হবে, একই সাথে চ্যাম্পিয়নস লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও তাদের মাঠে নামতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাব্রিয়েলের অনুপস্থিতি নিঃসন্দেহে কোচ মিকেল আর্তেতার জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ।

    অন্যান্য ক্লাবের অভিজ্ঞতা: নিউক্যাসল ও বায়ার্ন মিউনিখ

    এই সমস্যা কেবল আর্সেনালের একার নয়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের আরেক শক্তিশালী ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেডও গত সেপ্টেম্বরে একই ধরনের সমস্যার শিকার হয়েছিল। তাদের প্রতিশ্রুতিশীল ফরোয়ার্ড ইয়োনে উইসা নিজ দেশ ডিআর কঙ্গোর হয়ে ম্যাচে খেলতে গিয়ে চোট পান, যা নিউক্যাসলের আক্রমণভাগকে দুর্বল করে দেয়। একই সমস্যা বুন্দেসলিগার জায়ান্ট ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখও মোকাবিলা করেছে তাদের তারকা ডিফেন্ডার আলফন্সো ডেভিসকে নিয়ে। গত মার্চে কানাডার হয়ে ম্যাচে তিনি এসিএল (ACL) ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিনের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে পড়েন, যা বায়ার্নের রক্ষণভাগের জন্য এক বড় ধাক্কা ছিল। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে আন্তর্জাতিক বিরতিতে খেলোয়াড়দের চোট পাওয়ার বিষয়টি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা, যা বিশ্বের শীর্ষ ক্লাবগুলোকে প্রতিনিয়ত ভোগাচ্ছে।

    ক্লাবের জন্য এক চিলতে স্বস্তি? ‘দ্য অ্যাথলেটিক’-এর বিশ্লেষণ

    তবে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ক্লাবগুলোর জন্য এক টুকরো স্বস্তির জায়গা আছে। খেলাধুলাভিত্তিক বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম ‘দ্য অ্যাথলেটিক’ সম্প্রতি এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছে। তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জাতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়ে কোনো খেলোয়াড় চোট পেলে, সেই খেলোয়াড়ের ক্লাব সম্পূর্ণরূপে অসহায় হয়ে পড়ে না। এমন পরিস্থিতিতে ক্লাবগুলোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকে, যা আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা (ফিফা) বা সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত হয়। এই নিয়মাবলী সাধারণত খেলোয়াড়ের চিকিৎসা ব্যয় বহন এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খেলোয়াড়ের বেতনের একটি অংশ পূরণ করার ক্ষেত্রে ক্লাবগুলোকে সহায়তা করে থাকে। যদিও একজন মূল খেলোয়াড়কে চোটের কারণে মাঠে না পাওয়ার ক্ষতিপূরণ পুরোপুরি আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে হয় না, তবুও এই ব্যবস্থা কিছুটা হলেও ক্লাবের আর্থিক চাপ কমায় এবং তাদের কিছুটা স্বস্তি প্রদান করে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here