More

    ৮ ম্যাচে ৮ জয়, ২২ গোল, কোনো গোল খায়নি—বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ইংল্যান্ডের অবিশ্বাস্য রেকর্ড

    ফুটবল বিশ্ব সাক্ষী হলো এক অবিস্মরণীয় কীর্তির। ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের ইউরোপিয়ান বাছাইপর্বে ইংল্যান্ড জাতীয় দল শুধু জয়রথই বজায় রাখেনি, বরং এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে, যা ফুটবলের রেকর্ড বইয়ে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। থমাস টুখেলের অধীনে ‘থ্রি লায়ন্স’রা এমন এক নিখুঁত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে, যা তাদের বিশ্বকাপ যাত্রাকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।

    অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান: ৮ ম্যাচে ৮ জয়, ২২ গোল, ০ হজম

    ইংল্যান্ডের বাছাইপর্বের পরিসংখ্যান দেখলে যে কেউ বিস্মিত হতে বাধ্য। তারা মোট আটটি ম্যাচ খেলেছে এবং সবকটিতেই জয়লাভ করেছে। এই আট ম্যাচে তারা প্রতিপক্ষের জালে ২২টি গোল জড়িয়েছে, অথচ নিজেদের জালে একটি গোলও হজম করেনি। এমন অপ্রতিরোধ্য এবং গোলশূন্য প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা যেকোনো দলের জন্যই এক অসাধারণ অর্জন। এটি কেবল তাদের আক্রমণভাগের শক্তিকেই নয়, বরং রক্ষণভাগের দৃঢ়তা এবং দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টারও এক দারুণ উদাহরণ।

    গত ২১ মার্চ, লন্ডনের ঐতিহাসিক ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে আলবেনিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় দিয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। এটি ছিল কোচ থমাস টুখেলের অধীনে দলের প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। এরপর দীর্ঘ ২৪০ দিনের পথচলায়, গতকাল রাতে তিরানায় সেই আলবেনিয়াকেই একই স্কোরলাইনে (২-০) হারিয়ে ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের অভিযান শেষ করে টুখেলের দল। এর মাধ্যমে ইউরোপের প্রথম দল হিসেবে অক্টোবর মাসেই তারা ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার টিকিট নিশ্চিত করে ফেলে।

    ঐতিহাসিক গোলশূন্য অভিযান: ইউরোপের প্রথম দল হিসেবে অনন্য রেকর্ড

    ইংল্যান্ড দলের এই বাছাইপর্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো তাদের গোল হজম না করার রেকর্ড। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের এক আসরে ইউরোপের প্রথম দল হিসেবে তারা সব ম্যাচ জেতার পাশাপাশি কোনো গোল হজম না করার এক অভাবনীয় কৃতিত্ব অর্জন করেছে। এই হিসাবটি করা হয়েছে সেইসব বাছাইপর্বকে বিবেচনায় রেখে, যেখানে অন্তত ছয়টি ম্যাচ খেলতে হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, থ্রি লায়ন্সরা কেবল জেতার জন্যই খেলেনি, বরং প্রতিটি ম্যাচেই নিজেদের সর্বোচ্চ মান বজায় রেখেছিল, যা তাদের রক্ষণকে দুর্ভেদ্য করে তুলেছিল। দলের সুসংগঠিত ডিফেন্স লাইন, মাঝমাঠের নিশ্ছিদ্র কভার এবং গোলরক্ষকের অবিশ্বাস্য সেভগুলো এই রেকর্ড গড়ার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে।

    কেইনের রেকর্ড ভাঙা পারফরম্যান্স: পেলেকে ছাড়িয়ে গেলেন হ্যারি

    এই ঐতিহাসিক অভিযানের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা ছিলেন দলের অধিনায়ক এবং স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন। তিরানায় আলবেনিয়ার জালে করা তার দুটি গোল তাকে এক দারুণ মাইলফলক স্পর্শ করতে সাহায্য করেছে। তিনি কিংবদন্তি এডসন অ্যারান্তেস দো নাসিমেন্তো, যিনি বিশ্বজুড়ে পেলে নামেই পরিচিত, তার আন্তর্জাতিক গোলের সংখ্যাকে পেছনে ফেলেছেন। ইংল্যান্ডের জার্সিতে ১১২ ম্যাচে কেইনের গোল সংখ্যা এখন ৭৮টি। অন্যদিকে, ব্রাজিলের হয়ে পেলে ৯২ ম্যাচে করেছিলেন ৭৭টি গোল। ফুটবলের এক মহান কিংবদন্তিকে ছাড়িয়ে যাওয়া হ্যারি কেইনের অসাধারণ ফর্ম এবং ধারাবাহিকতারই প্রমাণ। তার এই অর্জন বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে তার অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে।

    ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: শতভাগ সাফল্যের ক্লাবে ইংল্যান্ড

    বিশ্বকাপের শুরুর বছরগুলো বাদ দিলে (যখন দলগুলো বাছাইপর্বে খুব কম ম্যাচ খেলত), ইউরোপে এর আগে মাত্র তিনটি দল শতভাগ সাফল্য নিয়ে বাছাইপর্ব শেষ করতে পেরেছিল। সেই তালিকায় ছিল জার্মানি (দুবার), স্পেন এবং নেদারল্যান্ডস। এই এলিট ক্লাবে এখন ইংল্যান্ডও নাম লেখালো।

    ইউরোপে ইংল্যান্ডের আগে সর্বশেষ শতভাগ (সব ম্যাচ জয়) সাফল্য পেয়েছিল জার্মানি। ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা তাদের ১০টি ম্যাচের সবকটিতেই জয়লাভ করেছিল। তবে সেই অভিযানে তারা ৪৩টি গোল করার পাশাপাশি ৩টি গোল হজমও করেছিল, যা ২০১৮ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়া জার্মানির জন্য একটি মিশ্র অভিজ্ঞতা ছিল। এই প্রেক্ষাপটে ইংল্যান্ডের অর্জন আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ তারা কেবল শতভাগ জয়ই নিশ্চিত করেনি, বরং কোনো গোল না হজম করার বিরল রেকর্ডটিও গড়েছে, যা তাদের এই সাফল্যকে জার্মানি, স্পেন বা নেদারল্যান্ডসের পূর্ববর্তী সাফল্যের চেয়েও অনন্য করে তুলেছে।

    ইংল্যান্ডের এই অসাধারণ পারফরম্যান্স কেবল তাদের খেলোয়াড়দের দক্ষতা বা কোচের কৌশলেরই ফল নয়, এটি পুরো জাতির জন্য এক গর্বের মুহূর্ত। ২০২৬ বিশ্বকাপে তারা যে এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চলেছে, এই বাছাইপর্ব তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here