দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দরের কৌশলগত গুরুত্বপূ্র্ণ নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার জন্য একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে হাইকোর্ট একটি চূড়ান্ত রায়ের দ্বারপ্রান্তে। আগামী ৪ ডিসেম্বর এই বহুল আলোচিত রিট আবেদনের ওপর রায় ঘোষণা করবেন উচ্চ আদালত, যা দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম প্রবেশদ্বার এই টার্মিনালের ভবিষ্যৎ পরিচালন পদ্ধতির ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার, রুলের ওপর বিস্তারিত শুনানি শেষে এই রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এই চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত এলো।
বস্তুত, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বেআইনি ঘোষণা করার আবেদন জানিয়ে এই রিট দায়ের করা হয়। প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ৩০ জুলাই হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেছিলেন, যেখানে এই প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। পরবর্তীতে, রিট আবেদনকারী পক্ষ এনসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ডিপি ওয়ার্ল্ডের চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা (Status Quo) বজায় রাখার জন্য একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করে, যা এই আইনি বিতর্কের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।
এই সম্পূরক আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্ট রুল শুনানির জন্য গত ১৩ নভেম্বর ১৯ নভেম্বরকে নতুন দিন হিসেবে ধার্য করেন। সে অনুযায়ী, গত ১৯ ও ২০ নভেম্বর এবং সর্বশেষ মঙ্গলবার, উভয় পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে এই গুরুত্বপূর্ণ রুলের ওপর দীর্ঘ ও বিশদ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আদালতে এই গুরুত্বপূর্ণ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন দেশের প্রখ্যাত জ্যেষ্ঠ আইনজীবীগণ: এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, আহসানুল করিম এবং কায়সার কামাল। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আনোয়ার হোসেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল: গুরুত্ব ও পটভূমি
২০০৭ সালে দেশের অর্থনীতিতে এক সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল। চট্টগ্রাম বন্দরের অত্যাধুনিক এই টার্মিনাল দ্রুতই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত মোট আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের সিংহভাগ এই নিউমুরিং টার্মিনাল দিয়েই পরিবহন হয়ে থাকে, যা এর কৌশলগত গুরুত্বকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এর অবদান অনস্বীকার্য।
পূর্ববর্তী সময়ে, এই টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল সাইফ পাওয়ারটেক। তাদের সাথে চুক্তি গত ৬ জুলাই শেষ হওয়ার পর, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড বর্তমানে এর পরিচালন ভার গ্রহণ করেছে। তবে, এই টার্মিনালকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আরও আগে, যা ২০১৯ সালের শুরুর দিক থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল এবং সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমান জটিলতার সূত্রপাত হয়েছে।
