দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত রাজউক প্লট বরাদ্দ দুর্নীতির মামলায় রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং শেখ রেহানার কন্যা, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকসহ মোট ১৭ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই চাঞ্চল্যকর মামলার রায় আগামী ১লা ডিসেম্বর ঘোষণা করা হবে। এই রায় দেশের বিচারিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সম্পন্ন ও রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ
মঙ্গলবার দুপুরে, ঢাকা মহানগরীর ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. রবিউল আলম এই মামলার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। দীর্ঘ শুনানির পর বিচারক এই চাঞ্চল্যকর মামলার রায় ঘোষণার জন্য ১লা ডিসেম্বর তারিখটি নির্ধারণ করেন। বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় এখন সবার দৃষ্টি আদালতের চূড়ান্ত রায়ের দিকে নিবদ্ধ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্যানেল আইনজীবী খান মো. মঈনুল হাসান সাংবাদিকদের জানান যে, আজকের দিনটি মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ধার্য ছিল। তিনি নিশ্চিত করেন, মামলার অন্যতম আসামি ও রাজউকের সদস্য খুরশীদ আলমকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। তাঁর পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী মো. শাহীনুর ইসলাম আদালতে জোরালোভাবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এবং তাঁর মক্কেলকে নির্দোষ দাবি করেন। অন্যদিকে, এই মামলার পলাতক অন্যান্য আসামিরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সুযোগ পাননি, যার ফলে তাঁদের পক্ষে কোনো আইনি যুক্তি পেশ করা সম্ভব হয়নি। যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পরপরই আদালত দ্রুত রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেন, যা মামলার নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
বিচারিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা
এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ক্রম অনুসরণ করে সম্পন্ন হয়েছে। গত ১৮ই নভেম্বর তারিখে আদালত এই মামলার সকল সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করেন। বিচার প্রক্রিয়ায় মোট ৩২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে, যা মামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং বিচারিক স্বচ্ছতার ইঙ্গিত বহন করে। এর আগে, গত ৩১শে জুলাই আদালত এই মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। অভিযোগ গঠনের সময় পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, যা তাঁদের আদালতে হাজির করার জন্য একটি আইনি পদক্ষেপ ছিল।
দুদকের তদন্ত ও মামলার প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, রাজউক প্লট বরাদ্দে সংঘটিত দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পৃথক ছয়টি মামলা দায়ের করেছিল। আজকের মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের মাধ্যমে ওই ছয়টি মামলার মধ্যে একটির বিচারিক চূড়ান্ত পর্যায় সম্পন্ন হতে চলেছে। এই মামলাগুলো রাজউকের প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দুদকের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যান্য মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রমও চলমান রয়েছে এবং তাদের ভবিষ্যৎ পরিণতিও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
