ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ যেন একতরফা এক যুদ্ধের গল্প। প্রথম টেস্টে মাত্র ৩০ রানের রোমাঞ্চকর জয়ের পর, গুয়াহাটিতে দ্বিতীয় টেস্টেও ভারতকে প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ঠেলে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়ারা ভারতকে ৫৪৯ রানের এক বিশাল লক্ষ্যমাত্রা ছুড়ে দেওয়ায়, এই টেস্ট সিরিজ তাদের জেতাটা এখন কেবলই সময়ের অপেক্ষা বলে মনে হচ্ছে। সিরিজটি ২-০ না হলেও, ১-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা নিঃসন্দেহে সিরিজ নিজেদের করে নিতে চলেছে।
এক ঐতিহাসিক লক্ষ্যের মুখে ভারত
ক্রিকেট ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ সফল রান তাড়ার রেকর্ড হলো ৪১৮। সেই রেকর্ড ভাঙতে হলে ভারতকে বর্তমান লক্ষ্যের সঙ্গে আরও ১৩১ রান যোগ করতে হবে, যা নিঃসন্দেহে অসাধ্য সাধনেরই নামান্তর। এই পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চতুর্থ দিনের খেলা শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ২ উইকেটে ২৭ রান। ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, যশস্বী জয়সোয়াল এবং লোকেশ রাহুল ইতিমধ্যেই সাজঘরে ফিরেছেন। ম্যাচের ভাগ্য বাঁচাতে পঞ্চম ও শেষ দিনে remaining ৮ উইকেট হাতে নিয়ে পুরোটা দিন ব্যাট করে ম্যাচ ড্র করতে হবে ভারতকে, যা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।
রেকর্ড ভাঙার স্বপ্ন, নাকি শুধুই অসম্ভব যাত্রা?
টেস্ট ক্রিকেটে জয়-পরাজয়ের পাশাপাশি ড্র-এর সম্ভাবনাও থাকে। কিন্তু এই সিরিজে যদি ম্যাচটি ড্রও হয়, তাতেও দক্ষিণ আফ্রিকা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে যাবে। এই জয় তাদের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত বয়ে আনবে, কারণ দীর্ঘ ২৫ বছর পর ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের বিরল কীর্তি স্থাপন করবে প্রোটিয়ারা।
চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ার প্রসঙ্গে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া যাক:
- বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড: ৪১৮ রান।
- এশিয়ার মাটিতে ৪০০ রানের বেশি তাড়া করে কোনো দলের জেতার নজির নেই। এখানে সর্বোচ্চ তাড়ার রেকর্ড ৩৯৫ রান, যা ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল।
- ভারতের মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড: ৩৮৭ রান। ২০০৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই রেকর্ড গড়েছিল স্বয়ং ভারত।
এই পরিসংখ্যানগুলিই বুঝিয়ে দিচ্ছে, গুয়াহাটির পিচে ভারতকে কতটা কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। ৫৪৯ রানের এই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিটি রানই তাদের জন্য এক নতুন রেকর্ড গড়ার সামিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার দাপট এবং সুচিন্তিত কৌশল
দক্ষিণ আফ্রিকার এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতির মূল ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল প্রথম ইনিংসের বিশাল লিডে। প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়ারা ৪৮৯ রানের এক শক্তিশালী সংগ্রহ গড়ে তুলেছিল, যেখানে ভারতীয় দল গুটিয়ে যায় মাত্র ২০১ রানে। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৮৮ রানের এক সুবিশাল লিড পায়। এই আত্মবিশ্বাসের ওপর ভর করে দ্বিতীয় ইনিংসে তারা কোনো তাড়াহুড়ো না করে, ঠান্ডা মাথায় ব্যাটিং চালিয়ে যায়। চতুর্থ দিনের তৃতীয় সেশনেও তারা আট ওভারের বেশি ব্যাটিং করে। অবশেষে ৭৮.৩ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৬০ রান সংগ্রহ করে ইনিংস ঘোষণা করে, যা ভারতকে ৫৪৯ রানের অসাধ্য লক্ষ্য দেয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার এই কৌশলগত ব্যাটিং এবং বোলারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই তাদের সিরিজের চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। ভারতের জন্য এখন একমাত্র আশা হলো পঞ্চম দিনে অলৌকিক কিছু ঘটিয়ে ম্যাচটি বাঁচিয়ে সিরিজ হার এড়ানো। তবে প্রোটিয়াদের লক্ষ্য এখন কেবলই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ২৫ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটানো।
