সম্প্রতি কাতারে অনুষ্ঠিত রাইজিং স্টারস এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের সুপার ওভারের পারফরম্যান্স নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা। ফাইনালের মতো হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে সুপার ওভারের টানটান উত্তেজনা, বিতর্কিত কিছু শট এবং শেষ মুহূর্তে ম্যাচের হাতবদল — সবকিছুই ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্ন। বিশেষত, সুপার ওভারে জিশান আলমের শট নির্বাচন এবং প্রথম দুই বলে ৬ রান পাওয়ার পরও শেষ চার বলে প্রয়োজনীয় ৬ রান তুলতে না পারার বিষয়টিই এখন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। এই কঠিন মুহূর্তে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের নেতৃত্ব দেওয়া আকবর আলী, দেশে ফিরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই ঘটনাবহুল সুপার ওভার এবং তার নিজের ভুলের বিষয়ে মুখ খুলেছেন।
সুপার ওভারের শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত
ফাইনালের স্নায়ুচাপপূর্ণ সুপার ওভারে বাংলাদেশ মাত্র ৬ রান তুলেই গুটিয়ে যায়। ইনিংসের শুরুটা অবশ্য ভালোই ছিল। প্রথম বলেই হাবিবুর রহমান ১ রান তুলে নেন। কিন্তু দ্বিতীয় বলে ঘটে বিপত্তি; আবদুল গাফফার পাকিস্তানি পেসার আহমেদ দানিয়ালের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বসেন, যা দলের ওপর চাপ বাড়ায়। এরপর এক ওয়াইড থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে ৫ রান আসে, যা কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনলেও, সেই স্বস্তি বেশিদিন টেকেনি। বৈধ তৃতীয় বলে জিশান আলমকে বোল্ড করে দেন দানিয়াল, যা বাংলাদেশের স্কোরিংয়ের গতিকে একেবারেই থামিয়ে দেয়। এই ঘটনার পর আরও ৩টি বল বাকি ছিল, যা থেকে সহজে ১০ রানের বেশি তোলা সম্ভব ছিল বলে মনে করেন অনেকেই। অথচ সেই সম্ভাবনাটুকুও আর কাজে লাগানো যায়নি।
আকবর আলীর আত্মবিশ্লেষণ: “সুপার ওভার কোনো দলই অভ্যস্ত নয়”
কাতার থেকে দেশে ফেরার পর সকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আকবর আলী সুপার ওভারের পারফরম্যান্স নিয়ে তার গভীর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “সুপার ওভারে কোনো দলই অভ্যস্ত নয়, সুপার ওভার হয়ই কালেভদ্রে। টানা দুইটা ম্যাচে সুপার ওভার খেলার ঘটনা কমই ঘটে।” তার মতে, সুপার ওভার এক ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি করে, যেখানে হাই-রিস্ক শট খেলা অনেকটাই অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। তিনি আরও যোগ করেন, “সুপার ওভারে হাইরিস্ক শটই খেলতে হয়, অনেক সময় ক্লিক করে, অনেক সময় করে না। আমি এভাবেই দেখছি ব্যাপারটাকে।” তার এই বক্তব্য সুপার ওভারের অন্তর্নিহিত চাপ এবং অপ্রত্যাশিত প্রকৃতির ওপর আলোকপাত করে।
রিপন মণ্ডলের বোলিংয়ের সম্ভাবনা এবং ম্যাচের পরিণতি
টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের হয়ে ইয়র্কার স্পেশালিস্ট হিসেবে খ্যাতি পাওয়া রিপন মণ্ডলের বিপক্ষে ১০ থেকে ১২ রান তোলা পাকিস্তান ‘এ’ দলের জন্য নিঃসন্দেহে সহজ হতো না। রিপনের নিখুঁত ইয়র্কার এবং চাপের মুখে উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ছিল। কিন্তু সুপার ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ মাত্র ৬ রান হওয়ায়, পাকিস্তানের জন্য লক্ষ্য অর্জন করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। এই কম সংগ্রহ প্রতিপক্ষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং ফলস্বরূপ পাকিস্তান ‘এ’ দল খুব সহজেই ম্যাচটি জিতে নেয়, যা বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের স্বপ্নকে ম্লান করে দেয়।
আকবরের ব্যক্তিগত ভুলের স্বীকারোক্তি: “অনূর্ধ্ব–১২–এর খেলোয়াড়েরাও করবে না”
সুপার ওভারের আলোচনার পাশাপাশি, আকবর আলী তার নিজের একটি “শিশুতোষ ভুল” নিয়েও কথা বলেছেন, যা তিনি ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে করেছিলেন। এই ভুলের বিষয়ে তার আফসোস ও আত্মসমালোচনা ছিল স্পষ্ট। তিনি বলেন, “ওই মোমেন্টে কী হয়েছে, আমি নিজেও জানি না। আমি কেন করেছি, এটার কোনো ব্যাখ্যাও নেই। তবে যে ভুলটা আমি করেছি, ওটা অনূর্ধ্ব–১২–এর খেলোয়াড়েরাও করবে না।” তার এই অকপট স্বীকারোক্তি একজন অধিনায়কের সততা এবং নিজের ভুলের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে। এটি কেবল একটি ম্যাচের ভুল নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে, যা তাকে এবং তার দলকে আরও পরিপক্ক হতে সাহায্য করবে। এই ধরনের কঠিন পরিস্থিতি থেকে শেখা পাঠ আগামীতে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিঃসন্দেহে আরও শক্তিশালী করবে।
