চোটের করাল গ্রাসে জর্জরিত থাকা সত্ত্বেও, এক দুর্দান্ত ফুটবল প্রদর্শনীতে বার্সেলোনা গ্রিক ক্লাব অলিম্পিয়াকোসকে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন ঘোষণা করেছে। এই অপ্রতিরোধ্য জয় কেবল দলের আত্মবিশ্বাসই বাড়ায়নি, বরং আসন্ন এল ক্লাসিকোর আগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকেও একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়ে রাখল যে, প্রতিকূলতা যতই আসুক না কেন, বার্সা তার জয় ছিনিয়ে নিতে প্রস্তুত।
চোট জর্জরিত বার্সেলোনা, তবুও অপ্রতিরোধ্য
বর্তমানে বার্সেলোনা আক্ষরিক অর্থেই একটি চোটজর্জর দল। তাদের স্কোয়াডের বেশ কয়েকজন মূল খেলোয়াড় পেশিতে টান, পিঠে ব্যথা, পায়ে আঘাত, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা এমনকি হাঁটুর দুই হাড়ের মাঝে চিড় ধরার মতো গুরুতর সব সমস্যায় ভুগছেন। রবার্ট লেভানডফস্কি, রাফিনিয়া, এবং দানি ওলমোর মতো তারকারা চোটের কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন, যা দলের শক্তি অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিল এবং এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল হান্সি ফ্লিকের দলকে।
ফেরমিন লোপেজের ঐতিহাসিক হ্যাটট্রিক
তবে, এই বিশাল শূন্যতা পূরণ করতে যেন আলোর দিশারি হয়ে এলেন চোট কাটিয়ে ফেরা তরুণ প্রতিভাবান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ফেরমিন লোপেজ। মাত্র ২২ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ তারকা একাই হ্যাটট্রিক করে এক নতুন ইতিহাস গড়লেন। বার্সেলোনার ইতিহাসে লোপেজই প্রথম স্প্যানিশ ফুটবলার, যিনি চ্যাম্পিয়নস লিগের এক ম্যাচে তিন গোল করার বিরল কীর্তি স্থাপন করলেন। কাতালান ক্লাবটির জার্সিতে ৬০০-এর বেশি স্প্যানিশ খেলোয়াড়দের মধ্যে পূর্বে আর কেউই ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের এই মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতায় হ্যাটট্রিক করতে পারেননি। এটি সত্যিই এক অবিস্মরণীয় অর্জন যা তাকে বার্সার ইতিহাসের পাতায় অমর করে রাখবে। লোপেজের এই পারফরম্যান্স প্রমাণ করে যে, সংকটকালীন সময়েও তরুণ প্রতিভা কীভাবে দলের ত্রাতা হয়ে উঠতে পারে।
অন্যান্য গোলদাতা ও দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা
লোপেজের এই অসাধারণ কীর্তির রাতে গোল উৎসবে শামিল হয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে ধারে আসা মার্কাস রাশফোর্ড, যিনি দুর্দান্ত দুটি গোল করে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এছাড়া, বার্সার উদীয়মান তারকা লামিনে ইয়ামালও নিজের জাত চিনিয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন গোল করেন। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হান্সি ফ্লিকের দল গ্রিসের সফলতম ক্লাব অলিম্পিয়াকোসকে ৬-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারায়। বিশেষ করে, গত চ্যাম্পিয়নস লিগের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলের খেলার ধরন থেকে শিক্ষা নিয়ে বার্সা যে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এই জয় তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত
ক্যাম্প ন্যু-এর সংস্কার কাজ চলায় আজও বার্সেলোনা এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে ম্যাচটি খেলেছে। ম্যাচের প্রথমার্ধেই ফেরমিন লোপেজের জোড়া গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বার্সা, যা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে এনে দেয়।
তবে, দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পেনাল্টি থেকে অলিম্পিয়াকোসের আইয়ুব এল কাবি একটি গোল শোধ করে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেন। কিন্তু ম্যাচের ৫৭ মিনিটে সান্তিয়াগো হেজ্জে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে গ্রিক ক্লাবটি ১০ জনের দলে পরিণত হয়, যা তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা অনেকটাই ম্লান করে দেয়। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে বিন্দুমাত্র ভুল করেনি হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। বাকি সময়ে তারা ১০ জনের অলিম্পিয়াকোসের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করে এবং একের পর এক গোল আদায় করে নেয়। লোপেজ তার হ্যাটট্রিক পূর্ণ করার পাশাপাশি, মার্কাস রাশফোর্ড জোড়া গোল করেন এবং লামিনে ইয়ামালও নিজের নামের পাশে একটি গোল যোগ করেন, ফলস্বরূপ ৬-১ গোলের এক বিশাল জয় নিশ্চিত হয় বার্সেলোনার।
এই বিশাল জয় বার্সেলোনার জন্য কেবল চ্যাম্পিয়নস লিগের পথই সুগম করেনি, বরং নিজেদের দৃঢ়তা ও গভীরতা প্রমাণ করে দিয়েছে।
