More

    ঢাকার ১১ স্থানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেফতার ১৩১

    রাজধানী ঢাকার বুকে সম্প্রতি এক নজিরবিহীন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, যেখানে আইনত নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো আইনশৃঙ্খলার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আকস্মিক ও উস্কানিমূলক কার্যক্রমে লিপ্ত হয়েছে। এসব ঝটিকা কর্মসূচির মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে।

    ঢাকা জুড়ে অভিযান: ১৩১ জন আটক, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা

    গতকাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) মহানগরীর ১১টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে এ ধরনের আকস্মিক বিক্ষোভ সমাবেশের চেষ্টা চালানো হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এসব ঝটিকা মিছিলের সময় চালানো অভিযানে ১৩১ জনকে আটক করা হয়েছে

    পুলিশ প্রশাসন জোর দিয়ে জানিয়েছে যে, এসব ঝটিকা মিছিলের সময় কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন যারা সক্রিয়ভাবে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন এবং যারা এসব উস্কানিমূলক সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পুলিশ আরও জানায়, কিছু কিছু মিছিলে মাত্র ৫ জন থেকে শুরু করে ৩০ জন পর্যন্ত নেতাকর্মীকে অংশ নিতে দেখা গেছে, যা তাদের সংগঠিত হওয়ার পদ্ধতির এক নতুন কৌশল নির্দেশ করে। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে দ্রুত কর্মসূচি সম্পন্ন করে দ্রুত স্থান ত্যাগের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

    সুনির্দিষ্ট ঘটনা ও গ্রেপ্তার বিবরণ

    বায়তুল মোকাররম ও মতিঝিলে সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা

    পুলিশ সূত্র থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক ১০:৩০ মিনিটে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট সংলগ্ন এলাকা এবং মতিঝিলের রাজউক ভবনের গলি, এই দুটি স্থানে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করে। পল্টন থানা পুলিশ দ্রুত তৎপরতা চালিয়ে বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে মো. ওয়াসিম (৪০) এবং মো. ফয়সাল (৩০) নামের দুজনকে আইনের আওতায় আনে। একই সময়ে, রাজউক ভবনের গলিতে আকস্মিক বিক্ষোভের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় মো. কায়েস হাসান (২৪) নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়। এই প্রচেষ্টাগুলো জনসমাগমের আগেই ব্যর্থ করে দেওয়া হয়।

    তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে ক্ষণস্থায়ী বিক্ষোভ

    ঢাকার তেজগাঁও এলাকার সাতরাস্তা মোড়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে একদল কর্মী হঠাৎ করেই একটি ঝটিকা মিছিল বের করে। আনুমানিক ১২ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী মাত্র ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ডের জন্য ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে দ্রুত ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এই স্বল্পস্থায়ী কার্যক্রমে জনমনে কিছুটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

    খিলক্ষেতে ককটেল বিস্ফোরণ ও চারজন আটক

    একই দিনে বেলা ১১টার সামান্য পর খিলক্ষেত থানার গলফ ক্লাবের সামনে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মী একত্রিত হয়ে একটি সংক্ষিপ্ত মিছিল করে। এই মিছিল চলাকালীন সময়ে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায় এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। পুলিশ দ্রুত তৎপর হয়ে ধাওয়া করে চারজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়, যারা এই নাশকতামূলক কার্যকলাপে জড়িত ছিল।

    অন্যান্য স্থানে পুলিশি তৎপরতা

    এসব সুনির্দিষ্ট ঘটনার পাশাপাশি, মহানগরীর আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঝটিকা কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা চালিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো: ধানমন্ডির স্টার কাবাব রেস্টুরেন্টের সামনে, নিউমার্কেটের বাটা সিগন্যাল, আসাদ গেটের আড়ংয়ের সামনে, যাত্রাবাড়ীর মাল্টিমিডিয়া সিএনজি স্টেশন, শেরেবাংলা নগরের আর্কাইভ ভবনের সামনে, গুলশান পুলিশ প্লাজার সামনে, এবং উত্তরা ৩ নম্বর ও ৮ নম্বর সেক্টর। এসব স্থানে পুলিশি টহল জোরদার ছিল এবং যেকোনো প্রকার জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হয়েছে।

    আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দৃঢ় অঙ্গীকার

    পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, যে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এবং আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তারা শূন্য সহনশীলতা নীতি অবলম্বন করবে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের এমন আকস্মিক ও উস্কানিমূলক কার্যক্রম সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ বিষয়ে সর্বদা সতর্ক রয়েছে। রাজধানী জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায় এবং জনজীবনে শান্তি বিঘ্নিত না হয়।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here