ঢাকায় আন্তর্জাতিক ফুটবলের পদধ্বনি: আফগানিস্তানের আগমন এবং বাফুফের ভেন্যু সংকট
আসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মিয়ানমারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আফগানিস্তান। আগামী ১৮ই নভেম্বর তারিখে নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে ঢাকার বুকে এই ম্যাচের আয়োজন করা হবে, যা বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমীদের জন্য এক বাড়তি আকর্ষণ নিয়ে এসেছে। তবে এই আন্তর্জাতিক ম্যাচের উপলক্ষকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) একটি প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করতে চাইলেও, অনাকাঙ্ক্ষিত এক ভেন্যু সংকটে পড়েছে। এটি দেশের ক্রীড়ামহলে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ফেডারেশনের মধ্যে সমন্বয়ের চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আফগানিস্তানের আগমন ও বাংলাদেশের প্রীতি ম্যাচের আকাঙ্ক্ষা
আফগানিস্তান দল যেহেতু মূল ম্যাচের বেশ আগেই ঢাকায় এসে প্রস্তুতি সারবে, সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এমন একটি ম্যাচ জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং আন্তর্জাতিক ফিফা র্যাংকিংয়ের দিক থেকেও সহায়ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাফুফে চেয়েছিল ১২ থেকে ১৪ই নভেম্বরের মধ্যে এই প্রীতি ম্যাচটি আয়োজন করতে, যাতে আফগানরা মূল ম্যাচের আগে বাংলাদেশে অবস্থানকালীন সময়েই খেলাটি সম্পন্ন করা যায়। এটি কেবল ক্রীড়াসূচির সুবিধাই নয়, বরং দুই দেশের ফুটবল সম্পর্কের জন্যও একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করত এবং দেশের ফুটবলের প্রচারণায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারত।
ভেন্যু সংকট: মূল কারণ এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ
বাফুফের এই চমৎকার ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের চলমান ব্যস্ততা। আগামী ৮ থেকে ১৪ই নভেম্বর পর্যন্ত এই ঐতিহাসিক মাঠে অনুষ্ঠিত হবে মর্যাদাপূর্ণ এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ। এটি একটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বৃহৎ ক্রীড়া আয়োজন, যা ইতিমধ্যেই মাঠের সিংহভাগ অবকাঠামো দখল করে আছে। এই সময়ে ফুটবল ম্যাচের জন্য প্রয়োজনীয় পিচ প্রস্তুত করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দর্শকের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের প্রধান ও একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামের এমন নিরন্তর ব্যস্ততা বাফুফেকে গভীর চিন্তায় ফেলেছে, কারণ প্রীতি ম্যাচের জন্য অন্য কোনো উপযুক্ত ভেন্যুর অভাব তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে।
আর্চারি ফেডারেশনের অনমনীয় অবস্থান
আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ এই বিষয়ে স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তিনি জানান, “এশিয়ান আরচারি ফেডারেশন থেকে আমাদের এই ভেন্যু ইতোমধ্যে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই ভেন্যুকে কেন্দ্র করেই আমরা আবাসন, নিরাপত্তা ও অন্যান্য পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি।” তাঁর কথা থেকে এটি পরিষ্কার যে, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ায় এবং একটি নির্দিষ্ট সূচি অনুসরণ করে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপের সময়সূচি পরিবর্তন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি আরও যোগ করেন, “বাফুফে যদি আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে ম্যাচ আয়োজন করতে পারে, করবে। কিন্তু আমাদের এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপের সময়সূচি পরিবর্তন করা সম্ভব না।” এর অর্থ দাঁড়ায়, বাফুফেকে তাদের নিজস্ব সমাধান খুঁজে বের করতে হবে, আর্চারি ফেডারেশনের সূচিতে কোনো পরিবর্তন আনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আর্চারি ফেডারেশন তাদের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির বিষয়ে অটল রয়েছেন।
বাফুফের সমাধানের প্রচেষ্টা ও শেষ ভরসা
এমন পরিস্থিতিতে বাফুফের কম্পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যান ও নির্বাহী সদস্য গোলাম গাউস আশার আলো দেখাচ্ছেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, “১২-১৪ নভেম্বরের মধ্যে আমরা ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ম্যাচ আয়োজন করতে চাই। আর্চারির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করব। একটি পথ বের করতে হবে।” বাফুফে এখন আর্চারি ফেডারেশনের সঙ্গে জরুরি ও নিবিড় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে কোনো এক উপায়ে উভয়পক্ষের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে একটি সমাধান বের করা যায়। স্টেডিয়ামের কিছু অংশ বা নির্দিষ্ট দিনের জন্য একটি সমঝোতা, অথবা কাছাকাছি অন্য কোনো বিকল্প ভেন্যুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। তবে ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের বিকল্প হিসেবে আন্তর্জাতিক মানের উপযুক্ত স্টেডিয়াম বাংলাদেশে খুবই সীমিত, যা বাফুফের জন্য চ্যালেঞ্জ আরও বাড়াচ্ছে। এই জটিল পরিস্থিতিতে একটি কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা বাফুফের জন্য এখন একটি প্রধান লক্ষ্য।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে: ফুটবল প্রেমীদের প্রত্যাশা
এই প্রীতি ম্যাচটি বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারত। এটি তরুণ খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করত, দেশের ফুটবলের র্যাংকিং উন্নয়নে ভূমিকা রাখত এবং ফুটবল প্রেমীদের মধ্যে নতুন উন্মাদনা সৃষ্টি করত। এখন দেখার বিষয়, বাফুফে এই ভেন্যু সংকট কাটিয়ে উঠে কাঙ্ক্ষিত প্রীতি ম্যাচটি আয়োজন করতে পারে কিনা, নাকি আফগানিস্তানের এই আগমন কেবল তাদের নিজেদের ম্যাচের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। দেশের ফুটবল প্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এই সংকটের একটি সফল সমাধানের জন্য, যা দেশের ফুটবলের অগ্রগতিতে সহায়ক হবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে।
