ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা লিওনেল মেসি, যিনি ইতোমধ্যেই মেজর লিগ সকার (MLS) এবং ইন্টার মায়ামির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন, তিনি তার চুক্তি নবায়নে সম্মত হয়েছেন। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ ২০২৮ মৌসুমের শেষ পর্যন্ত তাকে ফ্লোরিডার এই ক্লাবটিতে আবদ্ধ রাখবে। ইন্টার মায়ামি এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে আজ এই আনন্দ সংবাদ নিশ্চিত করেছে, যা বিশ্বজুড়ে ফুটবল অনুরাগীদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং মেসির আমেরিকার ফুটবল যাত্রাকে আরও সুদৃঢ় করেছে।
ঐতিহাসিক চুক্তির দৃশ্য এবং ‘হি ইজ হোম’
এই উল্লেখযোগ্য ঘোষণার সাথে সাথে, ইন্টার মায়ামির অফিশিয়াল এক্স (পূর্বে টুইটার) হ্যান্ডেলে একটি হৃদয়গ্রাহী ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ক্লাবটির ভবিষ্যৎ ঠিকানা, নির্মাণাধীন ফ্রিডম পার্ক স্টেডিয়ামের মনোরম পরিবেশে বসে কিংবদন্তি মেসি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন। ভিডিওটির ক্যাপশনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে লেখা হয়েছে, “হি ইজ হোম”—যা কেবল তার চুক্তি নবায়নকেই নয়, বরং ইন্টার মায়ামিকে তার নতুন ঠিকানা হিসেবে গ্রহণ করার গভীর আবেগকেও তুলে ধরে। এটি কেবল একটি স্বাক্ষর নয়, বরং ইন্টার মায়ামির ফুটবল ইতিহাসে এক নতুন এবং উজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা।
মেসির আনন্দ ও স্বপ্নপূরণের অভিব্যক্তি
ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে, বিশ্বজয়ী এই আর্জেন্টাইন তারকা তার গভীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। “এখানে থাকতে পেরে এবং এই অসাধারণ প্রকল্পের সাথে কাজ করে যেতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত ও আনন্দিত,” মেসি বলেন। তিনি আরও যোগ করেন, “এই মায়ামি ফ্রিডম পার্ক স্টেডিয়ামে খেলার যে স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম, তা আজ বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।” মিয়ামিতে তার আগমন মুহূর্ত থেকে যে অবিচ্ছিন্ন আনন্দ ও তৃপ্তি তিনি উপভোগ করছেন, সে বিষয়ে আলোকপাত করে তিনি বলেন, “মায়ামিতে আসার পর থেকে আমি এক অনির্বচনীয় সুখ অনুভব করছি, তাই এখানে আমার ফুটবল যাত্রা চালিয়ে যেতে পেরে আমি সত্যি আনন্দিত।” তার এই কথাগুলো ক্লাব ও সমর্থকদের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা ও প্রতিশ্রুতির পরিচায়ক এবং আমেরিকার ফুটবলের প্রতি তার গভীর অঙ্গীকারের প্রকাশ।
ডেভিড বেকহ্যামের দূরদর্শী মন্তব্য
ইন্টার মায়ামির অন্যতম সহ-মালিক এবং ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যাম এই চুক্তিকে ক্লাবের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বেকহ্যাম বলেন, “মেসি আজও তার পূর্বের মতোই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বিজয়ের নেশায় বুঁদ। একজন মালিক হিসেবে এমন একজন খেলোয়াড়কে পাওয়া আমাদের জন্য অসামান্য সৌভাগ্যের, যিনি ফুটবলকে হৃদয়ের গভীর থেকে ভালোবাসেন। তিনি শুধু এই দেশে খেলার মান উন্নত করেননি, বরং অসংখ্য তরুণ প্রতিভাকে ফুটবলের প্রতি অনুপ্রাণিত করেছেন এবং তাদের মধ্যে স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়েছেন।” বেকহ্যামের এই মন্তব্য মেসির কেবল খেলোয়াড়ি দক্ষতা নয়, বরং তার নেতৃত্বগুণ এবং আমেরিকান ফুটবলে তার স্থায়ী প্রভাবের প্রতি গভীর সম্মান প্রদর্শন করে।
২০২৬ বিশ্বকাপ এবং ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
২০২৩ সালের জুলাই মাসে ফরাসি ক্লাব পিএসজি ছেড়ে ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই লিওনেল মেসি এমএলএসকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার আগমন ক্লাবটিকে লিগস কাপ জেতাতে সাহায্য করেছে এবং বিশ্বজুড়ে লিগের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছে, যা ফুটবলের ইতিহাসে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। তার পূর্বের চুক্তিটি ২০২৫ সালের এমএলএস মৌসুমের শেষে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই নতুন চুক্তি কেবল তার মায়ামিতে থাকার সময়কালই বাড়ায়নি, বরং ফুটবল বিশ্বের জন্য আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে। এটি প্রায় নিশ্চিত করে যে, ৩৮ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকো জুড়ে অনুষ্ঠিতব্য ফিফা বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনার জার্সিতে মাঠে নামবেন। তার এই চুক্তি শুধু ইন্টার মায়ামির ভবিষ্যতকেই নয়, বরং বৈশ্বিক ফুটবলে তার অদম্য উপস্থিতি ও প্রভাবকে আরও সুদৃঢ় করবে, এবং লক্ষ লক্ষ ভক্তকে আরও কিছুদিন তার জাদুকরি খেলা উপভোগ করার সুযোগ দেবে।
