হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে চারটি দেশের বিশেষজ্ঞ দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন, যা সরকারের স্বচ্ছতা এবং পেশাদারিত্বের প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলের অংশগ্রহণ: স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের নিশ্চয়তা
দেশের প্রধান প্রবেশদ্বার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো অব্যবস্থাপনা ছিল কি না, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, চীন এবং তুরস্কের বিশেষজ্ঞ দল এই তদন্তে অংশগ্রহণ করবে। তাদের মূল কাজ হবে অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা এবং এর জন্য দায়ী পক্ষ বা বিষয়গুলো চিহ্নিত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া। এই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ একটি নিরপেক্ষ এবং সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য ফলাফল প্রদানে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কার্গো ভিলেজ ও ই-গেট পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টার বিস্তারিত বক্তব্য
গত শনিবার (২৫ অক্টোবর) বেলা পৌনে ১২টায় হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কার্গো ভিলেজ এবং নবনির্মিত ই-গেট পরিদর্শন শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তার বক্তব্যে অগ্নিকাণ্ড পরবর্তী পরিস্থিতি, ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম এবং বিমানবন্দরের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে।
অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রমে ফায়ার সার্ভিসের তাৎক্ষণিক ও কার্যকর ভূমিকা
উপদেষ্টা তার বক্তব্যে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে এবং ফায়ার সার্ভিস মোটেও ব্যর্থ হয়নি।” তার মতে, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। বিমানবন্দরের নিজস্ব ফায়ার অথরিটির চারটি ইউনিট মাত্র চার মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, যা তাদের দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর সক্ষমতার প্রমাণ। এর পনেরো থেকে বিশ মিনিটের মধ্যেই ফায়ার ব্রিগেডের অন্যান্য ইউনিটগুলোও এসে কার্যক্রমে যোগ দেয়। অগ্নিকাণ্ডের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে তিনি রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তে ওই স্থানে দাহ্য খাদ্যপণ্যের আধিক্যকে দায়ী করেন, যা আগুন নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল।
বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন ও যাত্রীদের সুবিধা বৃদ্ধি
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন ও যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোকপাত করেন। তিনি জানান, বিমানবন্দরে ইলেকট্রনিক গেট (ই-গেট) দ্রুত চালু করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা চলছে, যা আন্তর্জাতিক যাত্রীদের আগমন ও বহির্গমন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও দ্রুত করবে। এছাড়াও, দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন ভোগান্তি কমাতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও তিনি আশ্বাস প্রদান করেন। এটি প্রবাসীদের প্রতি সরকারের সংবেদনশীলতা ও দায়বদ্ধতার পরিচায়ক।
বিমানবন্দরের ফায়ার ইউনিটের সক্ষমতা: একটি স্পষ্টীকরণ
বিমানবন্দরের ফায়ার ইউনিটের সক্ষমতা নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, যে ফায়ার ইউনিটগুলো সাধারণত বিমান পরিচালনার সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত থাকে, সেগুলো কার্গো ভিলেজের মতো স্থানেও কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম। তাদের প্রশিক্ষণের পরিধি এবং সরঞ্জাম এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যেন তারা বিমানবন্দরের যেকোনো অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলায় পারদর্শী হয়। এটি অনেকটা বহুমুখী দক্ষতার মতো, যেখানে মৌলিক প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক সহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন, যা এই পরিদর্শন ও সংবাদ সম্মেলনের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে। সরকারের এই উদ্যোগ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে এবং ভবিষ্যতের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
