More

    সোনার জুতো হাতে পাওয়ার রাতে হাওয়ায় ভেসে অবিশ্বাস্য গোল মেসির

    মেসির জোড়া গোলের ঝলক: ইন্টার মিয়ামির দাপুটে জয় এবং প্লে-অফের হাতছানি

    নিজের অনবদ্য গোলক্ষুধা আর গোল করার সহজাত প্রবৃত্তি দিয়ে লিওনেল মেসি যেন জোড়া গোল করাটাকেই রীতিমতো নিজের অভ্যাসে পরিণত করেছেন। চলতি মৌসুমে এর আগেও ১১টি ম্যাচে তিনি একাধিক গোল করে দলের জয়ে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। শেষ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে সেই জোড়া গোলের ধারা কিছুটা ভাঙলেও, এবার আবারও পুরোনো রূপে ফিরে এসেছেন ফুটবলের এই মহাতারকা। ন্যাশভিলের বিপক্ষে তাঁর সেই জোড়া গোলে ভর করে ইন্টার মিয়ামি পেয়েছে এক দারুণ ৩-১ গোলের জয়, যা তাদের প্লে-অফ স্বপ্নকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।

    ন্যাশভিলের বিপক্ষে মাঠে নামার আগেই মেসিকে বরণ করে নেওয়া হয় বিশেষ এক সম্মানে। মেজর লিগ সকারের সর্বশেষ লিগ পর্যায়ের মৌসুমে অবিশ্বাস্য ২৯টি গোল করে তিনি নিশ্চিত করেছিলেন গোল্ডেন বুট। আজকের ম্যাচের আগে তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হয় সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত ট্রফি। পুরস্কার হাতে নিয়েই তিনি মাঠে নামলেন এবং অনবদ্য পারফরম্যান্স দিয়ে যেন আবারও প্রমাণ করলেন, কেন তিনিই এই সম্মানজনক গোল্ডেন বুটের যোগ্য দাবিদার এবং ফুটবলের অবিসংবাদিত এক মহানায়ক।

    ১৯তম মিনিটেই মেসির জাদুকরী ছোঁয়ায় স্কোরবোর্ডে প্রথম পরিবর্তন আসে। সতীর্থ লুইস সুয়ারেজের নিখুঁত ক্রস যখন ন্যাশভিলের পেনাল্টি বক্সের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন মেসি যেন এক মুহূর্তের জন্য আকাশে ভেসে উঠলেন। তাঁর বিমানসদৃশ হেডার গোলরক্ষককে পরাস্ত করে সরাসরি ন্যাশভিলের জালে আশ্রয় নেয়, যা দর্শকদের মধ্যে বিদ্যুৎ খেলে যায়।

    ইন্টার মিয়ামির দ্বিতীয় গোলটির শুরুটাও হয়েছিল মেসির পা থেকেই, তাঁর অনন্যসাধারণ সৃজনশীলতার ফসল হিসেবে। ডান পাশ থেকে তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত পাস খুঁজে নেয় উইংব্যাক ইয়ান ফ্রেইকে। ফ্রেইয়ের চমৎকার ক্রস থেকে ন্যাশভিলের রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিয়ে তাঁদেও আইয়েন্দে দারুণ এক হেডে বল জালে জড়ান, যা দলগত প্রচেষ্টার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

    প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে মেসি পেয়ে যান তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম সহজতম গোলগুলোর একটি। বাম পাশ থেকে অভিজ্ঞ জর্দি আলবার একটি মাপা ক্রস ন্যাশভিলের বিপদসীমায় প্রবেশ করে। গোলরক্ষক বলটি ধরতে এগিয়ে এলেও, প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডার তা ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাবে গোলরক্ষকের হাত থেকে বলটি ফসকে যায়। সুযোগসন্ধানী মেসি এই সুযোগটি কাজে লাগাতে এক মুহূর্তও দেরি করেননি। ঠান্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে আলতো টোকায় বল জালে জড়িয়ে তিনি নিজের জোড়া গোল নিশ্চিত করেন। এই নিয়ে চলতি মৌসুমে ১২তম বারের মতো তিনি একাধিক গোল করার কীর্তি গড়লেন, যা তাঁর ধারাবাহিকতার এক অনন্য প্রমাণ।

    ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে হানি মুখতারের গোলে ন্যাশভিল ব্যবধান কমালেও, পরাজয়ের গ্লানি এড়াতে পারেনি। এই ৩-১ গোলের জয় ইন্টার মিয়ামিকে এমএলএস প্লে-অফের কনফারেন্স সেমিফাইনালের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছে। ন্যাশভিলের বিপক্ষে তাদের সিরিজের আরও দুইটি ম্যাচ বাকি রয়েছে। এই দুইটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটি জয়ই তাদের জন্য সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করবে।

    তবে দলটি এই সময়ে নিশ্চয়ই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবে। গত বছরও প্লে-অফ সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয়লাভ করেও তারা পরের দুইটি ম্যাচে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছিল। তাই অতীতের সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইন্টার মিয়ামি এখন আরও বেশি সতর্ক এবং নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মেসি ম্যাজিক আর দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে, এটাই এখন ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশা।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here