দীর্ঘদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করতে নভেম্বরেই দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের নির্ভরযোগ্য ও একাধিক সূত্রের মাধ্যমে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে, যা লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
আসন্ন নির্বাচন ও দলের প্রত্যাশা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যখন দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সরগরম, ঠিক তখনই তারেক রহমানের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন দলের অগণিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। লাখ লাখ কর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে বদ্ধমূল ধারণা যে, দেশের মাটিতে ফিরে তিনি আসন্ন নির্বাচনে দলের পক্ষে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান ভূমিকা পালন করবেন। তাঁর আগমন দলের সাংগঠনিক শক্তিকে আরও সুসংহত করবে এবং নির্বাচনী কার্যক্রমে এক নতুন গতি সঞ্চার করবে বলে সকলের বিশ্বাস।
আইনি জটিলতার অবসান: প্রত্যাবর্তনে কোনো বাধা নেই
নিজের প্রত্যাবর্তন বিষয়ে তারেক রহমান চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভিন্ন আইনি জটিলতা ও মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যার ফলস্বরূপ তাঁর দেশে ফিরতে আর কোনো আইনগত প্রতিবন্ধকতা নেই। এই আইনি বাধা অপসারণ তাঁর প্রত্যাবর্তনের পথকে সম্পূর্ণ মসৃণ করেছে।
নিরাপত্তা প্রস্তুতি ও সরকারি সমন্বয়
তারেক রহমানের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর পক্ষ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের বিশেষ নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির একজন দায়িত্বশীল সদস্য সূত্রে জানা যায়, নভেম্বর মাসের ২৩ তারিখকে সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের দিনক্ষণ ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের সাথে নিবিড় সমন্বয়ের মাধ্যমে সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যা সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম করবে। নিরাপত্তার স্বার্থে অত্যাধুনিক বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে যে, এই সময়ের মধ্যেই সেটি জাপান থেকে দেশে এসে পৌঁছাবে।
বাসভবন: গুলশান-২ এভিনিউ-এর ঐতিহাসিক ঠিকানা
দেশে ফেরার পর তারেক রহমান রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-২ অ্যাভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাসভবনে অবস্থান করবেন বলে জানা গেছে। এই বাড়িটির একটি বিশেষ ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে; ১৯৮১ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান-এর আকস্মিক মৃত্যুর পর তৎকালীন সরকার এই বাসভবনটি তাঁর সহধর্মিণী খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দিয়েছিল। এই বাসভবনটি দীর্ঘকাল ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনের নানা ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে এবং পুনরায় তারেক রহমানের আগমনের মাধ্যমে এটি আবার আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে।
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের ঘোষণা
গত ২৫শে নভেম্বর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন। তিনি দৃঢ়ভাবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশে ফিরে আসবেন। তারেক রহমানের দেশে ফেরার সুনির্দিষ্ট তারিখ জানতে চাওয়া হলে সালাহউদ্দিন আহমেদ কৌশলগতভাবে উত্তর দেন যে, “খুব শিগগিরই নির্ধারিত তারিখটি সকলের কাছে স্পষ্ট হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, নভেম্বরের মধ্যেই তিনি দেশে ফিরবেন।” একই সংবাদ সম্মেলনে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারেক রহমান কোন কোন নির্বাচনী আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। যদিও এই বিষয়ে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি, তবে এটি দলের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে এবং তাঁর প্রত্যাবর্তনের রাজনৈতিক গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
