রাজধানী ঢাকার ক্রীড়াঙ্গনে এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে দেশের ক্রীড়া কর্তৃপক্ষ। আগামী ৮ নভেম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপের জমকালো উদ্বোধনের সকল প্রস্তুতি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, ঠিক তখনই একই ভেন্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল ম্যাচ আয়োজনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এতে করে একটি সম্মানজনক আন্তর্জাতিক ইভেন্ট ও জাতীয় ফুটবলের স্বার্থের মধ্যে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় স্টেডিয়ামের অধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব
আগামী ৮ নভেম্বর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে মর্যাদাপূর্ণ এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রায় চার শতাধিক অভিজ্ঞ আর্চারদের অংশগ্রহণে এই মেগা ইভেন্ট সফল করতে আরচারি ফেডারেশন অনেক আগেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে স্টেডিয়ামটি বরাদ্দ নিয়েছিল। আবাসন, আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সার্বিক আয়োজনের প্রায় সকল প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।
তবে, এই আরচারি আসর শেষ হওয়ার চার দিন পর, অর্থাৎ ১৪ নভেম্বরের পর একই ভেন্যুতে ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের হোম ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। এরও আগে, ১৩ নভেম্বর আর্চারি টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজন করতে চায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ ও বিকল্প প্রস্তাবনা
এই জটিল পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি ফুটবল ম্যাচ আয়োজনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং আরচারি ফেডারেশনকে বিকল্প ভেন্যু খুঁজে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন। গত শনিবার জাতীয় স্টেডিয়ামে কূটনীতিকদের সঙ্গে এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচে অংশ নেওয়ার পর তিনি আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য কমলাপুর স্টেডিয়াম অথবা আর্মি স্টেডিয়ামের মতো বিকল্প স্থান বিবেচনা করার প্রস্তাব দেন।
আরচারি ফেডারেশনের অনড় অবস্থান ও যুক্তিসমূহ
অন্যদিকে, আরচারি ফেডারেশন তাদের মূল ভেন্যু, অর্থাৎ জাতীয় স্টেডিয়ামের ব্যবহার নিয়ে অনড়। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ‘এশিয়ান আরচারি ফেডারেশন ইতোমধ্যে এই ভেন্যুটিকে (জাতীয় স্টেডিয়াম) স্বীকৃতি দিয়েছে। এই স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করেই আমরা আবাসন, নিরাপত্তা এবং অন্যান্য সকল পরিকল্পনা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। বাফুফে যদি আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের ম্যাচগুলো আয়োজন করতে পারে, তবে তা করবে। কিন্তু এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপের নির্ধারিত সময়সূচি পরিবর্তন করা আমাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’
উপদেষ্টার বিকল্প ভেন্যুর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আরচারি ফেডারেশনের এই কর্মকর্তা আরও যুক্তি দেন যে, ‘যদি কমলাপুর কিংবা আর্মি স্টেডিয়ামে আসরটি সরিয়ে নিতে হয়, সেক্ষেত্রে ওয়ার্ল্ড আরচারির (World Archery) অনুমতি নিতে হবে, যা এত অল্প সময়ে অর্জন করা অসম্ভব। এছাড়া, কমলাপুর স্টেডিয়ামের বর্তমান অবকাঠামো এবং সামগ্রিক পরিবেশ ওয়ার্ল্ড আরচারির অনুমোদন পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়, বিশেষত যদি তারা পরিদর্শনে আসে। আর আর্মি স্টেডিয়াম তার আয়তনে চার শতাধিক অ্যাথলেটের সংকুলান নিশ্চিত করতে সক্ষম নয়।’
এই পরিস্থিতি দেশের ক্রীড়া প্রশাসনের সমন্বয়হীনতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে এবং একটি সম্মানজনক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের সফল আয়োজন এবং জাতীয় ফুটবলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এখন সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
